একজন নারী তার স্বামীর কাছে শুধু ভাত-কাপড়ের জন্যই আসে না। তাহলে তো ধনী পরিবারের আদুরের দুলালীকে বিয়ের প্রয়োজন হতো না। বরং স্ত্রীর অর্থনৈতিক (ভরণ-পোষণের) অধিকারের পাশাপাশি তার আরো কিছু অধিকার রয়েছে, যেগুলো অপূর্ণ থেকে গেলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে। বৈবাহিক ব্যবস্থার স্থায়িত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে। একজন স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে শুধু ভরণ-পোষণে তুষ্ট থাকতে পারে না। বরং স্বামীর কাছে তার আরো কিছু চাওয়া-পাওয়ার থাকে। সেগুলো সে পূর্ণভাবে পেতে চায়। কোনো স্ত্রী যদি সত্যিকার অর্থে স্বামীভক্ত হয়, তাহলে সে তার স্বামীকে মনে-প্রাণে ভালোবাসে, স্বামীকে নিয়ে সে তার স্বপ্নের সৌধ নির্মাণ করে। সে ক্ষেত্রে স্ত্রীও চায় স্বামী তাকে ভালোবাসুক, তার প্রতি আলাদাভাবে খেয়াল করুক, তাকে গুরুত্ব দিক, তার সাথে হাসিমুখে কথা বলুক এবং আবেগপূর্ণ আচরণ করুক।
রাসূল (সা:) ইরশাদ করেন, ‘যদি কোনো স্বামী স্ত্রীর দিকে দয়া ও ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকায়, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার দিকে দয়া ও রহমতের দৃষ্টি নিয়ে তাকান। ‘ এই হাদিসে বোঝা যায়, স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা তাদের প্রতি রহম করা ইসলামী শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
স্ত্রীকে ভালোবাসা প্রসঙ্গে হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম যারা তাদের স্ত্রীদের জন্য উত্তম। আর আমি আমার স্ত্রীদের জন্য তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি। ’ -তিরমিজি
অন্য হাদিসে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের অসিয়ত আমার কাছ থেকে গ্রহণ করো। ’ এই আদেশ পালনের উদ্দেশ্য কেউ যখন স্ত্রীকে ভালোবাসে তখন তা আর দুনিয়া থাকে না; বরং সরাসরি দ্বীন হয়ে যায়, ইবাদতভুক্ত কাজ হয়ে যায়।
পুরুষের ৪ বিয়ে সুন্নাত, এইটা তো সবাই জানেন! বাকিগুলা জানেন? না জানলে আসুন জেনে নেই,
- স্ত্রীর সাথে রান্না করার কাজে, পরিস্কারের কাজে, ধোয়া-মোছার কাজে সহায়তা করা সুন্নাত।
- ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে স্ত্রীকে মুখে খাবার তুলে খাওয়ানো সুন্নাত।
- স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা প্রকাশ করা সুন্নাত।
- স্ত্রীর ভুল ক্ষমা করা সুন্নাত।
- স্ত্রীর জন্য নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখা সুন্নাত।
- স্ত্রীর অনুভূতিগুলো জানার চেষ্টা করা এবং তাকে যখন প্রয়োজন হয় সান্ত্বনা দেওয়া সুন্নাত।
- স্ত্রীর সাথে খেলা করা, গল্প করা, ঘুরতে নিয়ে যাওয়া সুন্নাত।
- স্ত্রীর কোলে আবদ্ধ হওয়া এবং শিথিল করা সুন্নাত।
- স্ত্রীকে সুন্দর নাম নিয়ে ডাকা সুন্নাত।পরিবারের ব্যক্তিগত সদস্য এবং বন্ধুদের কাছে তার ব্যক্তিগত কথা প্রকাশ না করা সুন্নাত।
- স্ত্রীর পিতা-মাতাকে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা করা সুন্নাত।
- স্ত্রীর এটো খাবার খাওয়া সুন্নাত।
- স্ত্রীর অভিমান ভাঙ্গানো সুন্নাত।
- বয়স্ক মহিলাকে বিবাহ করা সুন্নাত।
- ডিভোর্সী নারীকে বিবাহ করা সুন্নাত।
- বিধবা নারীকে বিবাহ করা সুন্নাত।
- স্ত্রীর কোলে শুয়ে কুর’আন তিলাওয়াত করা সুন্নাত।
- স্ত্রীকে সালাম দেওয়া সুন্নাত।
অনেক পুরুষই আছেন, যারা এগুলোর একটা সুন্নাতও পালন করতে রাজি হন না। কিন্ত ৪ বিয়ের সুন্নাতটা পালন করতে তারা সদা প্রস্তুত। আর সব স্ত্রীকে আলাদা বাসস্থান, সমান অধিকার না দিলে কেয়ামতের ময়দানে শুয়ে শুয়ে খোড়ায়ে যেতে হবে রবের সামনে, পারবেন তো?
আমরা মুসলামান। আমাদের প্রত্যেকটি কাজ সুন্নতের অনুসরণে হওয়া দরকার। জীবনের যে পর্যায়ের বিষয় হোক না কেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতে তার সূত্র পাওয়া যাবে। তাই প্রত্যেক কাজ সুন্নতের নিয়তে করা জরুরি। তাহলে দুনিয়ার সব কাজ দ্বীনের কাজে পরিণত হবে, এর দ্বারা সওয়াব হাসিল হবে। তবে এ জন্য দরকার অনুশীলন।
স্ত্রীর অধিকারগুলা ভালভাবে আদায় করেন, দুনিয়াটা জান্নাত হবে, পরকালটাতেও রবের সান্নিধ্য পাবেন ইন-শা-আল্লাহ।