বর্তমানে আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাশরুম চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণ যুবকরা মাশরুম চাষ করছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গৃহিণীরাও চাষ করছেন। বর্তমানে সাভারে মাশরুম সেন্টার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মাশরুম উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। সাভারের বেলাল রাজিব যিনি মাশরুম ভাই নামে পরিচিত তিনি মাত্র দেড় বছরে শুুধু অনলাইনের মাধ্যমেই ৮ লাখ টাকার মাশরুম বিক্রি করেছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন বেকারত্ব অভিশাপ নয়। ইচ্ছে শক্তি থাকলে শূণ্য থেকে লাখপতি হওয়া যায়।
মাশরুম হলো একধরনের ছত্রাক এবং এদের অধিকাংশই ব্যাসিডিওমাইকোটা এবং কিছু অ্যাসকোমাইকোটার অন্তভুক্ত যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি। মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণসম্পন্ন, প্রোটিন সমৃদ্ধ সবজি। খাদ্য হিসেবে মাশরুম অতুলনীয়। প্রাচীনকাল থেকেই এটি পুষ্টিসমৃদ্ধ, সুস্বাদু ও দামী খাবার হিসেবে বিবেচিত। কারণ এর মধ্যে আমিষ, শর্করা, মিনারেল, অ্যামাইনো এসিড, অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান। একে সবজি মাংসও বলা হয়ে থাকে। প্রতি ১০০ গ্রামে (শুকনো মাশরুম) ২০-৩০ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। আর এই মাশরুম দিয়ে রান্না করলে খাবারের মান ও স্বাদ বেড়ে যায়। মাশরুম সাধারণত চপ, পাকোড়া, চিংড়ি মাছ, ডিম ভূনা, সবজি, মিক্সড সবজি, স্যুপ, খিচুড়ির সাথে খাওয়া যায়।
বাংলাদেশের তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আদ্রতা মাশরুম চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এটি ঘরের ফসল, চাষের জন্য কোনো আবাদি জমির প্রয়োজন হয়না। যার চাষের জমি নাই তিনিও বসত ঘরের পাশের অব্যবহৃত জায়গায় অথবা ঘরের বারান্দা ব্যবহার করে অধিক পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করতে পারেন।বাংলাদেশের চাষপযোগী মাশরুমের জাতগুলো হলো- ঝিনুক মাশরুম, দুধ মাশরুম, কান মাশরুম, বোতাম মাশরুম , তাপ সহনশীল বোতাম মাশরুম, শিতাকে মাশরুম, খড় মাশরুম। এসব মাশরুম তৈরী করা হয় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে।
মাশরুম সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন হয় ফ্রিজ। নরমাল ফ্রিজে ৭ দিন রাখা যায় আর ডিপ ফ্রিজে ১ মাস। এই ১ মাস রাখার জন্য মাশরুমকে ফুটন্ত পানিতে ২ মিনিট লবন দিয়ে সিদ্ধ করতে হবে। এর পর পানি ঝড়িয়ে তারপরে ডিপে রাখতে হবে।
মাশরুম আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি। এই মাশরুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কম চর্বি, কোলেস্টেরল মুক্ত এবং লিনোলেয়িক এসিড সমুদ্ধ হওয়ায় মাশরুম হৃদরোগীদের জন্য খুব উপকারী। ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে। হাড়ের ক্ষয় রোধ দূর করে, ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। শিশুদের জন্যও আদর্শ খাবার। তাছাড়া বাত, ব্যথা, জন্ডিস, কৃমি, রক্ত বন্ধ হওয়ার কাজে মাশরুম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মাশরুম কৌষ্ঠ কাঠিন্য দূর করে। টিউমার কোষের বিরুদ্ধে কাজ করে।
বেলাল রাজিব কালের দূরবীনকে বলেন, মাশরুম ৩০০-৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে থাকেন। বর্তমানে এই মাশরুমের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে।