নারী প্রথম সৃষ্টি হয়েছিল একজন স্ত্রী হিসাবে। একজন পুরুষের একাকিত্ব দূর করার জন্য। তার পর এই নারীর পরিচয় হয়েছে মা হিসাবে। দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা একটি অপরিহার্য অংশ। কিন্তু জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ভালবাসার রঙও মাঝে মাঝে ফিকে হয়ে যায়। এমন সময়গুলোতে স্ত্রী পারেন স্বামীর ভালবাসা অর্জন করে এবং তা ধরে রেখে জীবনে শান্তির স্বর্গ রচনা করতে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি ভয়ের কথা বলেছেন। জানিয়েছেন অধিকাংশ নারী জাহান্নামি হবে। তাই নারীদেরকে দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক সুন্দর ও নিরাপদ করার অনেক নসিহত পেশ করেছেন।
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যত উত্তম ও মধুর হবে, দাম্পত্য জীবনে সুখ ও শান্তি তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। কুরআন এবং হাদিসের বিবরণ থেকে জানা যায় যে, উত্তম স্ত্রী হলো তারা, যারা স্বামীকে যথাযথ সম্মান করে কারণ পরস্পরের প্রতি যথাযথ সম্মানই দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভের উপায়।
স্বামীর সঙ্গে কখনোই এমন কোনও আচারণ করা যাবে না, যে আচারণ আপনার সম্পর্কে দূরত্ব বাড়াবে ও সংসার ভাঙার কারণ হতে পারে। এমন আচারণ করবেন না যা দেখে স্বামী আপনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। খুঁজে নেবে নতুন সঙ্গী।
জানেন কি কি কারণে স্বামী আপনার প্রতি বিমুখ হতে পারেন? তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক কারণগুলো-
- অনেক স্ত্রী মনে করেন, তার চিন্তা-ভাবনা বা অনুভূতির বিষয়গুলো তার স্বামী বুঝতে পারে। তাই সেগুলো তার সঙ্গে শেয়ার করতে বা বলতে বিরত থাকে। উল্টো তারা প্রত্যাশা করে সে কেন বুঝে নেয় না তার কথা। আর এটা স্বামীর কাছে অনেক সময় বিরক্তি সৃষ্টি করে।
- অনেক স্ত্রীই তার সঙ্গীকে বোকা মনে করে এবং নিজেকে তার চেয়ে চালাক ও বুদ্ধিমান মনে করেন। এজন্য বিভিন্ন সময় তার সঙ্গীকে নিয়ে মজা করতে দেখা যায়। এটা পুরুষদের কাছে বিরক্তিকর বিষয় মনে হয়।
- মনে রাখবেন, শ্বাশুড়ীর সঙ্গে কখনোই নিজেকে মেলাতে যাবেন না। শ্বাশুড়ীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সব স্বামীরা পছন্দ করেন। তাই শ্বাশুড়ীর দেখভালসহ তার প্রতি শ্রদ্ধার সঙ্গে কথা বলুন। মনে রাখবেন শ্বাশুড়ীর সঙ্গে খারাপ আচারণ স্বামীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায়। শুধু তাই নয় শ্বশুরবাড়ির অন্যান্য সদস্যের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখুন।
- অতিরিক্ত দুর্ভাবনা বর্তমানের আনন্দকে মাটি করে দিতে পারে। অনেক স্ত্রীই দেখা যায় তারা কী কী করবে, কী কী করতে চায়, কী কী করা দরকার ইত্যাদি প্যাচাল দিয়ে সঙ্গীর কান ঝালাপালা করে ফেলেন। স্ত্রীর এমন আচরণে স্বামী বিরক্ত হতে পারে।
- অনেক স্ত্রীকেই দেখা যায়, সব বিষয়াদি অন্যের সঙ্গে শেয়ার করে। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনার সঙ্গীকে বিভিন্ন তথ্যভারে ভারাক্রান্ত করে দিয়েন না। বিশেষ করে আপনার সঙ্গে গোপনে যেসব শেয়ার করা হয়েছে সেগুলো গোপনীয়ই রাখুন।
যে ভাবে স্বামীর ভালোবাসা পাবেন
- আপনার স্বামী বাইরে থেকে ঘরে ঢোকার সময় দরজায় এমন ভাবে ছুটে যান যেন আপনি তারই অপেক্ষায় ছিলেন। দরজা খোলার সাথে সাথেই হাসিমুখে সালাম দিন। ঘরে ঢোকার সাথে সাথেই সমস্যার কথা বলা শুরু করবেন না। তাকে কিছুটা মানসিক বিরতি দিন।
- সুন্দর/আকর্ষণীও পোশাক পড়ুন। আপনার চুল সব সময় আঁচড়ে রাখুন। আপনি যদি গৃহিণী হন, সারাদিন ধরে রাতের পোশাক, ম্যাকসি(ঢিলাঢালা আরামদায়ক পোশাক) পরে থাকবেন না। নিজেকে আকর্ষণীও করে সাজান। ঘাম/মশলা জাতীয়গন্ধ থেকে পরিচ্ছন্ন ও সুরভিত থাকুন।
- আপনার স্বামীকে মাঝে মধ্যে কোন গৃহস্থালি কাজ দিন, কাজটি করে ফেললে তাকে ধন্যবাদ জানান।
- আপনার স্বামীরও আবেগ অনুভুতি আছে, কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। তাকে তার বন্ধুদের সাথে কোন রকম অপরাধবোধ ছাড়া কিছু সময় কাটাতে দিন। তাকে বাইরে যেতে উৎসাহ দিন যাতে সে নিজেকে ঘরের ভেতর আবদ্ধ মনে না করে।
- ছোট ছোট বিষয়ে রেগে যাবেন না বরং হাসি মশকরা করুন।
- আপনার স্বামীকে সব সময় বোঝাতে চেষ্টা করবেন আপনি তাকে ভালোবাসেন।
- স্বামীর অনুমতি ছাড়া বাড়ির বাহিরে যাবেন না, আর তাকে না জানিয়ে তো অবশ্যই বের হবেন না।
- আপনার স্বামী আপনার জন্য কষ্ট করে কাজ করে উপার্জন করছেন এবং আপনার খাওয়া-পরার বন্দোবস্ত করছেন এই ব্যপারটির সবসময় প্রশংসা করুন।
- আপনার ত্বকের যত্ম নিন, বিশেষত চেহারার। চেহারাই আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু।
- অন্তরঙ্গ ব্যপারে যদি আপনার কোন অসন্তুষ্টি থাকে, তাকে জানান, তার সাথে কথা বলুন।