Wednesday, September 18, 2024
No menu items!

বেণী

প্রতিটি মেয়েই তার বাবার রাজকন্যা। আমিও ব্যাতিক্রম নয়ই। দেখতে সুন্দরী না হলেও বিশ্ব সুন্দরী। মেয়েরা বাবা মার কাছে কখনো বড় হয় না। এখনো আমাকে ছোটইভাবে। মা আমার আলাদা সত্ত্বা তাকে নিয়ে হাজার পেজ লিখলেও শেষ হবে না তবে আজ বাবাকে নিয়ে লিখতে ইচ্ছে করছে।আমার বাড়িতে আব্বু যখন বেড়াতে আসেন খুবই ভালোলাগে। যে কয়টা দিন থাকে নিজেকে ফুরফুরে লাগে। মনে হয় হাফছেড়ে বাঁচি। আব্বুর খাবার দাবার নিয়ে কোন মন্তব্য নাই। যাই রাঁধি তাহাই তার কাছে অমৃত। তুলনামূলক আমার শ্বশুর আব্বু বাসায় আসলে শুধু মাত্র খাবার নিয়ে ভয়ে থাকি। উনি খাবারের ব্যাপারে খুবই সতর্ক। আগে দর্শনদারী তার পর গুন বিচারি। তরকারির রং তাহার পছন্দ না হলে হবে না। তবে ব্যাক্তিগত ভাবে তিনিও অসম্ভব ভালো। এখন পর্যন্ত উঁচু গলায় কথা বলেননি। অন্য কোন বিষয়ে তাহার কোন অভিযোগও নাই। আমার বাবা বেশ উদাসীন। সরকারি চাকরি সুবাদে অনেক জায়গায় ঘুরেছেন।কবিতা লিখেন কিনা। শুনেছি যারা কবি তারা এরকম হয়। তবে আমার ছেলেদের ক্ষেত্রে বেশ মনোযোগী। কি খাবে না খাবে, কি পড়বে না পড়বে গোসল করানো সব যেন তার মাথা ব্যাথা। কিছু দিন আগেও আমার ছেলেদের ডায়েরিয়ায় ফ্লোর এমনভাবে পরিষ্কার করছিলেন যেন পানি পরিষ্কার করছেন। পারলে দু হাত পেতে রাখে আর তার নাতি দ্বয়ের পেটে আরাম বোধ হয়। এখনো মশারি না টানিয়ে ঘুমাতে গেলে ঘুম থেকে উঠে দেখি মশারীর ছায়া তলে। অলসতায় ভেজা কাপড় বাথরুম রেখে আসা আমি যখন মনে করি ততোক্ষনে বারান্দায় তারে পানি টানতে শুরু করেছে ।

চুলে তেল দিতে একদম ভালো লাগে না। কিন্তু আমার আব্বু চুলের ব্যাপারে খুবই সেনসেটিভ। তাকে না বলে কখনো চুল ছোট করলে তাহার দুঃখের শেষ থাকত না। আব্বু ছোটবেলা থেকেই আমাদের চার বোনকে লাইন ধরে তেল দিয়ে দিতো শেষে লাল আর সবুজ ফিতে দিয়ে বেণী করে দিতো।যে দিন ওটিতে ঢুকবো তার আগে আমি গোসল শেষ করে বাথরুম থেকে বের হতেই দেখি তার হাতে আলাদা তোয়ালে আর চিরুনি। আমার যতক্ষন চুল শুকাছিলনা আচরিয়েই যাচ্ছেন। অবশেষে চুল শুকিয়ে একটি টাইট বেণী করে ওটিতে নিয়ে গেলেন। অসুস্থতা জনিত কারণে আমার সিজারের পর টুইন ছেলেদেরও বিভিন্ন জটিলতায় ইনকিউবেটরে রাখতে হলো আড়াই দিন। শুনেছি মাঝ রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সিঁড়িতে বসে দেওয়ালে হেলান দিয়ে আমার ছেলেদের একটু ভালো খবরের প্রত্যাশায় ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করতেন। কখনো কেউ কোন প্রয়োজনে ডাকে পাছে যদি কাউকে খুঁজে না পায় সেই ভয়ে রাতভর কষ্ট করা।আমার বাবার আমার চুলের ব্যাপারে যতটা সচেতন আমি ঠিক ততটাই অসচেতন। বিয়ের পর খুব কম সময়ই চুলে বেণী করি। তেল দিতেও অনিহা লাগে।অথচ যে আমি ঘুমতে যাবার আগে বেণীর হাত থেকে রেহাই পেতাম না, সেই আমি আজ বেণী করি না বললেই চলে, সেই আমি খোঁপা আর কাটা দিয়েই পার করলাম সাত বছর।আব্বু ভালোবাসি কথাটা কখনো মুখফুটে বলা হয়নি কিন্তু আপনাকে আমি অনুভব করি আমার খোলা রুখ্যচুলে। ভালোবাসি ছোটবেলার সেই লাল -সবুজের ফিতায় বাঁধা বেণীতে।

মোছা: ছালামুন কাওলা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে জনপ্রিয় খবর

সাম্প্রতিক মন্তব্য