গরু গোশতের শুটকি বৃহত্তর ময়মনসিংহের একটি মজাদার খাবার। এক সময় কোরবানি ঈদের পর প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গরুর শুটকি বানানো হতো। আধুনিকতার ছোঁয়ায় গোশত সংরক্ষণের নানা ব্যবস্থা থাকায় এখন এটি প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবুও এখনো অনেক মা তার দূরে থাকা সন্তানের জন্য, কিছু সময় নিজেদের রুচি পরিবর্তনসহ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে বানিয়ে থাকেন।
শুটকি করার পদ্ধতি
হাড় এবং চর্বি ছাড়া সলিড গরুর গোশত ছোট ছোট টুকরো করে একটু হলুদ দিয়ে ভালো করে সেদ্ধ করতে হবে যাতে ভেতরে কাঁচা না থাকে। সিদ্ধ টা এমন হবে যাতে পুরোপরি নরম না হয় এবং একটু শক্ত থাকে। এর পর পানি ঝরিয়ে ফেলে ঠান্ডা হলে গুনাতার বা সুতলিতে গেঁথে দিয়ে মালার মত করে আড়ে ঝুলিয়ে দিতে হবে অথবা টিনের চালেও দিতে পারেন। এতে করে দ্রুত শুকিয়ে যাবে। কড়া রোদ থাকলে ৪ থেকে ৫ দিনেই শুকিয়ে যাবে। খেয়াল রাখতে হবে এসময় কাক খুব জালাতন করবে তাই পারলে নেট দিয়ে ঢেকে দিবেন। কড় কড়ে শুকিয়ে গেলে এয়ার টাইট টিনে বা কাঁচের বয়মের মধ্যে রেখে দিন। এ শুটকি আপনি ১ বছর পর্যন্ত রেখে খেতে পারবেন। তবে মাঝে মাঝে রোদে শুকাতে দেবেন। অনেক সময় স্যাঁত স্যাঁতে হয়ে ছাতা ধরে যায়।
রান্নার পদ্ধতি
রান্নার পদ্ধতিটিও অনেক সোজা। যে দিন রান্না করবেন তার আগের দিন রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন। পরদিন সকাল বেলা গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শীল দিয়ে থেতো করে ঝুরি করে নিতে হবে। তার পর রান্নার বাকী প্রসেসটা সাধারণ গরুর গোশত রান্না করার মত। ভুনা করতে পারেন। যেমন ইচ্ছা তেমন করেই এই শুটকি রান্না করা যায়।
রান্নার পদ্ধতি
১ম পদ্ধতি
আদা বাটা, রসুন বাটা, জিরা, হলুদ, মরিচ গুড়ো, গরম মসলা, তেল, লবণ এবং গরুর গোশতের শুটকি সব একসাথে মেখে একটু পানি দিয়ে কষিয়ে ফেলুন। কষা হয়ে গেলে পরিমাণ মত পানি দিয়ে সিদ্ধ করুন। হয়ে গেলে আলাদা পাতিলে একটু তেল গরম করে গোটা জিরা তেজপাতা, শুকনো মরিচ আর পিয়াজ ভেজে নিয়ে এতে হওয়া তরকারি ছেড়ে দিন। কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে নামিয়ে গরম গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।
২য় পদ্ধতি
কড়ায়ে তেল গরম হয়ে এলে তেজপাতা এলাচ, দারচিনি পিয়াজ আদা, রসুন, জিরা বাটা, হলুদ, মরিচ গুড়ো, লবণ সব মিশিয়ে পানি দিয়ে কষিয়ে নিন। কষা হয়ে গেলে গরুর গোশতের শুটকি ছেড়ে দিয়ে ভালো করে নেড়ে আবারও কিছুক্ষণ কষিয়ে পরিমাণ মত পানি দিয়ে সিদ্ধ করুন। তার পর গরম মসলা ছিটিয়ে দিন। পুরো তরকারি হতে ১.৫-২ ঘন্টার মত লাগবে।