বুর্জ খলিফা বর্তমানে পৃথিবীর গগনচুম্বী অট্টালিকা বা উচ্চতম ভবন। এটি আরব আমিরাতের দুবাই শহরের দোহা স্ট্রিট, শেখ জায়েদ সড়ক, অবস্থিত। এটি “দুবাই টাওয়ার” নামেও পরিচিত। নির্মাণকালে এর বহুল প্রচারিত নাম বুর্জ দুবাই থাকলেও উদ্বোধনকালে নাম পরিবর্তন করে “বুর্জ খলিফা” রাখা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সম্মানে ভবনটির নামকরণ করা হয় বুর্জ খলিফা। “বুর্জ খলিফা” এতই উঁচু একটি ভবন যে নিচতলা আর সর্বোচ্চ তলার মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য ১০°সেলসিয়াস। বিশ্বের সর্বোচ্চ এই ভবনটির মোট ওজন ৫ লাখ টন। এই ‘বুর্জ খলিফা’ ভবনটি খালি চোখে ৬০ মাইল বা ৯৫ কিলোমিটার দূর থেকেও দেখা যায়।
বুর্জ খলিফার নির্মাণকাজ শুরু হয় ২১ সেপ্টেম্বর ২০০৪ এবং কাজ শেষ হয় ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে। ৪, জানুয়ারি, ২০১০ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্ভোধন করা হয়। এটি তৈরীতে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছে। এমনো দিন গেছে যে দিন ১২ হাজার নির্মাণ কর্মী একযোগে নির্মাণ প্রক্রিয়ায় নিযুক্ত ছিল। সে সময় প্রতি তিন দিন পর পর একটি ছাদ তৈরি করা হয়েছে। খারাপ আবহাওয়ায় যাতে ভেঙে না পড়ে বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য ভবনটি ওয়াই আকৃতিতে তৈরি করা হয়েছে। এর ওজন সমভাবে বহন নিশ্চিত করতে তিনটি উইং রয়েছে। এই স্থাপনার স্থপতি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অড্রিয়ান স্মিথ।বুর্জ খলিফার মালিকানা দুবাইয়ের একটি আধা সরকারি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি এমার প্রপার্টিজ।
রকেটের মতো দেখতে ১৬০ তলাবিশিষ্ট ‘বুর্জ খলিফা’র মোট উচ্চতা ২,৭১৭ ফুট। বুর্জ ভবনে ৫৪টি এলিভেটর বা লিফট আছে। এগুলোর গতি ঘণ্টায় ৪০ মাইল। এই ভবনে ১,০৪৪টি বাসা আছে; ৪৩তম এবং ৭৬তম তলায় আছে দুটি সুইমিং পুল। আরো আছে ১৬০ কক্ষবিশিষ্ট একটি হোটেল। ১২৪তম তলায় দর্শকদের জন্য প্রকৃতি দর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সন্ধ্যা হলে বুর্জ খলিফার আলোর ঝলকানিতে হলুদ, লাল, সবুজসহ নানান রঙের বাতিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠে পুরো শহর।
ভবনটির চারপাশে রয়েছে ৭ দশমিক ৪ একরের অপরূপ সুন্দর উদ্যান ও ৩০ একর আয়তনের কৃত্রিম হ্রদ। এ‘বুর্জ খলিফা’র বাইরের প্রাঙ্গনে কৃত্রিম হ্রদে দৃষ্টিনন্দন একটি ফোয়ারা রয়েছে। এই ফোয়ারটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ১৩৩ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড। ১৫ মিনিট পরপর পানির নাচের প্রদর্শনী চলে এখানে। আরব্য রজনীর সুরের সঙ্গে তাল পানির নাচন মুগ্ধ করার মতো।
বিলাস বহুল এই ভবনের একেকটি কামরা কেনার জন্য বর্গ মিটার প্রতি ক্রেতাদের গুনতে হয়েছে গড়ে ৩৭,৫০০ মার্কিন ডলার। এত উচ্চ মূল্য থাকা স্বত্বেও দুই বছরের মধ্যেই ৯০০ কামরার প্রায় সবকটিই বিক্রি হয়ে গেছে। বুর্জ খলিফায় প্রতি বর্গফুট জায়গার মাসিক ভাড়া (অফিস-আদালতের জন্য) চার হাজার ডলার বা দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা।
ভবনের ভেতরে যেতে হলে খরচ করতে হবে পকেটের টাকা। ১৬০ তলা ভবনের মধ্যে প্রায় এক শ’ তলায় যেতে টিকেট নেয় ২শ’ দিরহাম, অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আর ১৬০ তলায় যেতে হলে অনুমতি নিয়ে আরও অনেক বেশি দিরহাম গুনতে হয়। অনলাইনে টিকেট পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার চিন্তা নেই। একমাস আগে বুকিং দিলে খরচ কম পরবে। সূর্যাস্তের আগে গেলে সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়।