রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সিদ্দিক, যিনি রিয়াজ নামেই পরিচিত। নব্বই দশকের শেষদিকে লাভার বয় খেতাব পাওয়া এই নায়ক বহুমাত্রিক চরিত্রে অভিনয় দিয়ে সকল শ্রেণীর দর্শক প্রিয়তা পেয়েছিলেন। রিয়াজ ১৯৭২ সালে ফরিদপুর জেলা সদরের কমলাপুর মহল্লায় একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার ছেলেবেলা কেটেছে ফরিদপুর শহরের সিএনবি স্টাফ কোয়ার্টার্সের চৌহদ্দিতে। তার বাবা জাইনুদ্দিন আহমেদ সিদ্দিক ছিলেন সরকারি অফিসের একজন কর্মকর্তা; মাতা আরজুমান্দ আরা বেগম গৃহিণী ছিলেন। ছোটবেলায় রিয়াজের ইচ্ছা ছিল স্থপতি হবেন;পরে পরিবারের বড়দের উৎসাহে যশোরে বিমানবাহিনীতে ভর্তি পরীক্ষা দেন এবং উত্তীর্ণ হন। যথাযথ প্রশিক্ষণ শেষে তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে বিমানচালক হিসেবে যোগদান করেন। বৈমানিক হিসাবে তিনি একটি জেট ফাইটারে মোট ৩০০ ঘণ্টা উড্ডয়ন সম্পন্ন করেন। রিয়াজ শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ১৯৯৩ সালে বিমানবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হন।
চাকরিচ্যুতির পর তিনি বাড়ি ছেড়ে ঢাকা শহরে পাড়ি জমান এবং চাচাতো বোন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ববিতার হাত ধরে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে একজন অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হৃদয়ের কথা চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেন।
রিয়াজের নিজ পরিবারের কেউ অভিনয়ের সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও তার তিন চাচাতো বোন কোহিনুর আক্তার সুচন্দা, ফরিদা আক্তার ববিতা ও গুলশান আরা চম্পা বাংলাদেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। ছোটবেলায় জনপ্রিয় টিভি সিরিজ টারজান এবং বাংলাদেশী পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘টারজান’ তরুণ রিয়াজের উপর বিরাট প্রভাব বিস্তার করেছিল। এছাড়াও টম ক্রুজ অভিনীত হলিউড সুপারহিট চলচ্চিত্র টপ গান এবং পুনর্নির্মিত টারজান চলচ্চিত্রও তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল।
১৯৯৭ সালে মহম্মদ হান্নান পরিচালিত ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ ছবির মাধ্যমে জনপ্রিয় নায়কে পরিণত হন এই নায়ক। তবে সালমান শাহের মৃত্যুতে যে শূণ্যতা দেখা দেয় প্রযোজক ও পরিচালকরা রিয়াজকে বেছে নেন সেই শূণ্যতা পূরণের প্রচেষ্টায়। শাবনূরের সঙ্গে জুটি বেঁধে আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা পান রিয়াজ। নানা কারণে সেই জুটি ভেঙ্গে গেলে পূর্ণিমার সঙ্গেও জুটি বেঁধে দারুণ সাফল্য পান তিনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করা রিয়াজ উপহার দিয়েছেন।
রিয়াজ ‘ইট ওয়াজ রেইনিং দ্যাট নাইট’ নামে একটি ইংরেজি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। কলকাতার সঙ্গে বেশ কিছু যৌথ প্রযোজনার ছবিতেও দেখা গেছে তাকে। যার মধ্যে ‘মনের মাঝে তুমি’ সিনেমার সাফল্য উল্লেখ করার মতো।
নায়ক রিয়াজ প্রয়াত কথাসাহিত্যিক ও নন্দিত নির্মাতা হুমায়ুন আহমেদের স্নেহভাজন ছিলেন। এ নির্মাতার দুই দুয়ারী, শ্যামল ছায়া সিনেমায় রিয়াজকে দেখা গেছে৷ এছাড়াও হুমায়ুন আহমেদের বহু নাটকে অভিনয় করেছেন রিয়াজ। উড়ে যায় বকপক্ষী নামের ধারাবাহিকটি বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়৷ বার্জার, ইউরো কোলা, নাসির গ্লাস, ড্যানিশ কন্ডেন্স মিল্ক’সহ বেশ কিছু মানসম্পন্ন বিজ্ঞাপনেও দেখা গেছে রিয়াজকে। যা তার ক্যারিয়ারকে আরও সমৃদ্ধ করেছে৷
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বিটিভির আনন্দমেলাসহ বহু অনুষ্ঠানে একজন সফল উপস্থাপক হিসেবেও রিয়াজকে পাওয়া গেছে৷ অনেকদিন ধরেই সিনেমাতে ধেখা যায় না। অনিয়মিত শোবিজেও৷ তবে সম্প্রতি আবারও নতুন করে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন। ভালো গল্প ও চরিত্র পেলে রিয়াজের দেখা মিলতে পারে চলচ্চিত্রে।
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন। চলচ্চিত্রগুলো হলো- দুই দুয়ারী (২০০০), দারুচিনি দ্বীপ (২০০৭) ও কি যাদু করিলা (২০০৮)। বর্তমানে স্ত্রী তিনা ও একমাত্র কন্যা আমীরাকে নিয়ে সুখের সংসার করছেন রিয়াজ৷