আমরা সবাই জানি মৃত্যু আমাদের সবার জীবনে ধ্রুব সত্য। সবাইকে একদিন এই অমোঘ মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে। কিন্তু কিছু কিছু মৃত্যু আছে যা মানুষ কে গভীরভাবে নাড়া দিয়ে যায়। হাজারো মানুষের হৃদয়ে চিরদিনের জন্য গভীর ছাপ ফেলে যায়। তেমনি হাস্যোজ্জ্বল এবং তেজোদ্দীপ্ত বরেণ্য কৃষিবিদ, জননেতা বদিউজ্জামান বাদশা ভাই এর অকাল মৃত্যুটি আমাদের সবাইকে করেছে অশ্রু সজল। লাখো মানুষের অশ্রুসিক্ত চিরবিদায়য়ের মধ্য দিয়ে গতকাল নিজ বাড়ি, নালিতাবাড়ী গণমানুষের নেতা কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা ভাই চির নিদ্রায় শায়িত হয়েছেন।
আজ আমার আদর্শিক রাজনৈতিক সহযোদ্ধা,
প্রিয় অগ্রজ সতীর্থ বদিউজ্জামান বাদশা ভাই
যাঁর সাথে হাতে হাত রেখে একসাথে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) এর সবুজ চত্বরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি তাঁকে নিয়ে দুটি কথা নিবেদন করছি। ছাত্র রাজনীতি কালীন সময়ে বাদশা ভাই এর সাথে একটি গভীর আত্মিক সম্পর্ক ছিল। রাজনীতির এক মধুর বন্ধন ছিল। সেই রাজনীতি করতে গিয়ে তৎকালীন সময়ে অনেক চড়াই উতরাই পাড়ি দিতে হয়েছে। কিন্তু বাদশা ভাই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আপদে বিপদে পাশে ছিলেন সব সময়। আদর্শিক পতাকাকে সমুন্নত রাখতে সবাইকে নিয়ে অসীম সাহসীকতার সাথে বন্ধুর পথ অতিক্রম করেছেন। সেই বাদশা ভাই আকস্মিকভাবে দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে আই,সি,ইউ তে শেয় নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
আশির দশকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন কালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া প্রাণের সংগঠন “বাংলাদেশ ছাত্রলীগ” করতে গিয়ে যে ক’জন অগ্রজ শ্রদ্ধেয় নিবেদিতপ্রাণ ছাত্রনেতা’র সংস্পর্শে এসেছিলাম তাঁর মধ্যে বদিউজ্জামান বাদশা ভাই ছিলেন অন্যতম একজন। সেই আশির দশকে তখন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন প্রয়াত কৃষিবিদ ও সাবেক সংসদ সদস্য, শ্রদ্ধেয় জনাব শওকত মোমেন শাহজাহান ভাই। আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মোহন ভাই। বাকসু’র ভি,পি ছিলেন প্রয়াত কৃষিবিদ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও মাননীয় সংসদ সদস্য, শ্রদ্ধেয় আব্দুল মান্নান, আমাদের সবার মান্নান ভাই। আর বাকসু”র জি,এস ছিলেন শ্রদ্ধেয় কৃষিবিদ ডঃ প্রদীপ রঞ্জন কর, সবার প্রিয় ‘প্রদীপ দা’, বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। বাকসু’র নির্বাচনে জয়লাভ করার পর বাকৃবিতে ছাত্রলীগের জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। এই নেতাদের পাশে তখন ছায়ার মত থাকতেন বাদশা ভাই। সময়ের বিবর্তনে এক সময়ে আলোচনার টেবিল থেকে শুরু করে, পার্টি অফিস এর সভা, হলের সভা, পাঁচ তলা প্রশাসনিক ভবনের কোরিডোরের সভা, দলের সভা সহ রাজপথের মিছিল মিটিংএ সবাইকে ছাপিয়ে যে নেতাটি ধীরে ধীরে তাঁর নিজস্ব বলার ঢং, অসাধারণ শব্দ চয়ন, কথামালা আর বাচন ভঙ্গি তথা বক্তৃতা দিয়ে একজন অনলবর্ষী বক্তা হিসেবে খুব সহজেই সকল মহলের (ছাত্র, শিক্ষক এবং কর্মকর্তা- কর্মচারী) দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাঁর বক্তৃতায় এক ধরনের সম্মোহনী শক্তি ছিল যা ছাত্রসমাজ কে গভীরভাবে মাদকতার মত টানতো। তাঁর বক্তৃতায় এক ধরনের মায়াবী যাদু ছিল যা সবার হৃদয়কে ছুঁয়ে যেতো অতি সহজেই। সেই কারনে বাদশা ভাই খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। তাঁর এই সুনাম বিশ্ববিদ্যালয় গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে ময়মনসিংহ জেলা শহরে। তাঁর এই বাগ্মিতায় আকৃষ্ট হন ময়মনসিংহ শহরের প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা রফিক উদ্দিন ভুঁইয়া এবং অধ্যক্ষ মতিউর রহমান স্যার। তাঁদের নির্বাচনী সভায় বাদশা ভাই এর উপস্থিতি ছিল অনেকটা অপরিহার্য।
বাদশা ভাই ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক, কর্মী বান্ধব এবং অগ্রজ ও অনুজদের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয়। তাঁর বড় প্রমাণ রেখেছেন আশির দশকে। যখন আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়ে প্রয়াত বরেণ্য ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আব্দুর রাজ্জাক ভাই ‘বাকশাল’ গঠন করেছিলেন তখন ছাত্রলীগও স্বাভাবিকভাবেই দুভাগে ভাগ হয়ে ব্রেকেটবন্দী হয়ে গিয়েছিল। একটি ছিল আওয়ামীলীগের অধীন জালাল-জাহাঙ্গীর এর প্যানেল যাকে বলা হতো ছাত্রলীগ (জা-জা) আর একটি ছিল বাকশাল এর অধীন ফজলু – মুকুল এর প্যানেল যাকে বলা হতো ছাত্রলীগ (ফ-মু)। কাকতালীয় ব্যাপার ছিল যে, ঐ সময়ে ছাত্রলীগ (জা-জা) কমিটির সহ-সভাপতি হয়েছিলেন শ্রদ্ধেয় প্রয়াত মান্নান ভাই আর ছাত্রলীগ (ফ-মু) কমিটির সহ-সভাপতি হয়েছিলেন বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী শ্রদ্ধেয় প্রদীপ দা। ফলে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সকল কর্মী সাথীরা পড়েছিল মহা বিপদে। কোন কূল রাখি। অনেকটা শ্যাম রাখি না কুল রাখি এর মত। দুজনই আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় প্রিয় নেতা। শুরু হল দল ভারীর পালা। কিন্তু একথা অনস্বীকার্য যে প্রদীপ দা বিশ্ববিদ্যালয়ে মান্নান ভাই এর চেয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে একটু বেশী জনপ্রিয় ছিলেন। ফলে প্রদীপদা’র দিকেই ছাত্রলীগ এর পাল্লাটা একটু ভারী মনে হচ্ছিল।
এই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছিল এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ব। ফলে ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ সাধারণ কর্মীরা এটি মেনে নিতে পারছিল না। খুবই হতাশ ও বিপরযস্ত। সবার মনেই একটি মানসিক যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে যেতে লাগল। অনেকেই মনের দুঃখে নিজেদেরকে সংগঠন থেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করল। অনেকে নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে সরব থেকে নীরব হয়ে গেল। বলতে গেলে সাংগঠনিকভাবে ছাত্রলীগ এর একটি ক্রান্তিকাল চলছিল। সেই ক্রান্তিকালে বাদশা ভাই হাল ধরেছিলেন অনেক শক্ত ভাবে। মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং স্বাধীন বাংলাদেশের উপরাষ্ট্রপতি প্রয়াত সৈয়দ নজরুল ইসলাম এর ছোট ছেলে, সৈয়দ শরিফুল ইসলাম ওরফে শরীফ ভাই তখন কৃষি অর্থনীতি অনুষদের ছাত্র। বাদশা ভাই তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা আর চৌকস বুদ্ধিমত্তা দিয়ে শরীফ ভাইকে ছাত্রলীগের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে নিয়ে আসলেন সম্মুখভাগে। সাধারণ ছাত্র ছাত্রীরা এই ঐক্যের পতাকাতলে সমবেত হয়ে শ্লোগান দিল “আমরা ‘জা-জা’ও নই ‘ফ-মু’ও নই, আমরা সবাই ছাত্রলীগ। এরই ধারাবাহিকতায় এক সময় সিদ্ধান্ত হয় যে, সবাই মিলে ঐ সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর সভাপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তনয়া, আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করা হবে আর নেত্রী যা বলবেন তাই হবে। বেশ কয়েকটি বাসে করে সেদিন দল বেঁধে শত শত ছাত্রলীগ কর্মী ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধুর ৩২ নাম্বারের বাড়িতে শেখ হাসিনা এর সাথে সাক্ষাত করা হয়। সুদীর্ঘ আলোচনার পর জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সবাইকে বলে দিলেন মূল স্রোতের সাথে থাকতে। সবার আর বুঝতে বাকী রইলো না যে, ছাত্রলীগ (জা-জা)ই হলো মাননীয় জননেত্রী শেখ হাসিনা’র আশীর্বাদ পুষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করলেন দক্ষ কারিগর হিসেবে বাদশা ভাই। তৎকালীন আওয়ামী লীগের সভাপতি, আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সম্মেলন এর মাধ্যমে ছাত্রলীগ এর নতুন কমিটি করে দিয়ে যান। আর সেই ঐতিহাসিক সম্মেলন এর মাধ্যমে গঠিত কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন সবার প্রিয় বদিউজ্জামান বাদশা ভাই আর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন সালেহ আহমদ ভাই। ছাত্র জনতার প্রতিটি গণতান্ত্রিক এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে, মিছিল ও সমাবেশে ছিলেন অগ্রভাগে। তাঁর এই চলার পথ সব সময়ই মসৃণ ছিল না। হাঁটতে হয়েছে অনেক বন্ধুর পথ। রাজনৈতিক কারনে জীবন রক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বাইরে গিয়ে থেকেছেন বহুবার। আশির দশকে গফরগাও এর প্রয়াত মাননীয় এম,পি জনাব আলতাফ গুলন্দাজ ময়মনসিংহ শহরের বাসা টি ছিল তাঁর বিপদের আশ্রয়স্থল। আমাদের প্রিয় বন্ধু, গফুর (আজ প্রয়াত), ঈশাখাঁ হল শাখার ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সহ প্রিয় বাদশা ভাই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে ময়মনসিংহ জেলা কারাগারে কাটিয়েছেন এক নাগারে প্রায় এক বছরের মত সময়। আশির দশকের সেই সময়ে পুলিশের অমানুষিক নির্যাতনে বাদশা ভাই আর গফুর এর জীবন ছিল সংকটাপন্ন। সুদীর্ঘ এক বছর সেই কারাভোগ শেষে বাদশা ভাই আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। রাজনীতির হাল ধরেছেন। সত্যি বলতে কি তাঁর বাচন ভঙ্গিতে এক ধরনের মায়াবী ক্যারিশমা ছিল যে কারনে তিনি খুব সহজেই সকলকে একসাথে টানতে পারতেন।
এরপর বাদশা ভাইকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ (মান্নান-নানক) এর সহ-সভাপতি হন। কৃষকলীগের সহ-সভাপতি সম্পাদক হয়েছিলেন। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া রাজনীতির এই মানুষটি ঘুরে বেরিয়েছেন। দিন রাত সংগঠনের জন্য কাজ করেছেন। রাকসু, ঢাকসু এর নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে ক্যাম্পাস থেকে ক্যাম্পাসে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। মুহুর্মুহু করতালি তে তাঁর বক্তৃতায় বিমোহিত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ সহ দেশের শহর থেকে গ্রামের আপামর ছাত্র শ্রমিক জনতা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে রাজনীতির মাঠে বাদশা ভাই এর বক্তৃতা শুনার জন্য মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন। পিন পতন নীরবতায় মন্ত্র মুগ্ধের মত বাদশা ভাই বক্তৃতা শুনতেন সবাই। তাঁর সাথে অনেক জায়গায় যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। একবার কিশোরগঞ্জ এর বাজিতপুর কলেজের ছাত্রলীগের সম্মেলনে ময়মনসিংহের সর্বজনবিদিত প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান স্যার এর আমন্ত্রণে ঐ সময়ের বাকসু’র ভিপি মান্নান ভাই, বাকসু’র জি,এস প্রদীপ দা আর বাদশা ভাই বক্তৃতা করতে যান। ঐ সময়ে সহযোদ্ধা হিসেবে এই অগ্রজ শ্রদ্ধেয় ছাত্রনেতাদের সাথে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। সাথে নিয়েছিলেন ঐ সময়ের ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক আর বর্তমানে বঙ্গবন্ধু স্টাডি মুভমেন্ট এর সভাপতি, সবার সুপরিচিত মুখ, মৎস্য বিশেষজ্ঞ ও কৃষিবিদ জনাব মজিবুর রহমান মজিব ওরফে ‘মানিক’ ভাই আর সর্বকনিষ্ঠ আমাকে ( আমি তখন সবেমাত্র ঈশাখাঁ হল শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছি)। ঐদিনের সম্মলনে অনেকেই বক্তৃতা করেছেন। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে জ্বালাময়ী বক্তৃতা করে ঐদিন সবার নজর কাড়েন সেই দিনের উদীয়মান ছাত্রনেতা, বাদশা ভাই। সম্মেলন শেষে উপস্থিত ছাত্র শিক্ষক জনতা সবাই বাদশা ভাই এর সাথে পরিচিত হবার কি প্রবল আকাঙ্ক্ষা! সেই স্মৃতিগুলি কি ভুলা যায়। চোখের সামনে এখনও জ্বল জ্বল করে ভেসে উঠছে। ভাবলেই আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। আবেগে অশ্রু সজল হই সতত।
বাদশা ভাই এর অসাধারণ বাগ্মিতা তাঁকে এনে দিয়েছিল এক গগনচুম্বী জনপ্রিয়তা। হৃদয় নিংড়ানো কথামালার মজবুত গাঁথুনি দিয়ে চমৎকার বক্তৃতা করতেন। এটি তাঁর একান্তই একটি নিজস্ব স্টাইল ছিলো। বরেণ্য জননেতা ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ শ্রদ্ধেয় তোফায়েল আহমেদ ভাই কেও দেখেছি মনযোগ সহকারে বাদশা ভাই এর বক্তৃতা শুনতে। অপলক দৃষ্টিতে বক্তৃতা করার সময় বাদশা ভাই এর দিকে তাকিয়েও থাকতে।
বাদশা ভাই বঙ্গবন্ধু আদর্শের রাজনীতি করতে গিয়ে আপামর ‘জনতার বাদশা’ হয়ে গিয়েছিলেন। তাই শেরপুর এর নালিতাবাড়ি’র মানুষ তাঁকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি। এলাকার মানুষ এর ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। তাই সারা দেশের উপজেলা চেয়ারম্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। কিন্তু রাজনীতির পথে হাঁটতে গিয়ে হয়ত ভুল করে হোঁচট খেয়েছিলেন। দোষে গুনেই মানুষ। শত বিপদের দিনেও দলের প্রতি আনুগত্য ছিল শতভাগ। সকল যোগ্যতা থাকা সত্বেও গণমুখী চরিত্রের রাজনীতির এই সাহসী মানুষটি না পেলেন দলের কোন পদ পদবী বা না হতে পারলেন অন্য কিছু। বিপদের দিনে ছিলেন দলের কান্ডারী আর দলের সুদিনে সাইড লাইনে রেখে দেয়া হলো। শেষ পর্যন্ত জীবন দিয়েই মনের সকল কষ্ট ও বেদনার অবসান হলো চিরদিনের জন্য। বিদায় বেলায় হাজার হাজার মানুষ এর উপস্থিতিই জানান দিয়ে যায় জীবিত বাদশার চেয়ে মৃত বাদশা কত জনপ্রিয়! তাই বলি আপনি আমাদের কাছে মুকুটহীন সম্রাট এর মতই সেই চিরচেনা ‘বাদশা’ ভাই হিসেবে অপার ভালবাসা আর শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে আপামর মানুষের হৃদয়ের গহীন কোনে আছেন এবং থাকবেন। পরম শান্তিতে ঘুমান বাদশা ভাই। পরিশেষে শুধু এইটুকুই বলিঃ
“নয়ন সমুখে তুমি নাই
নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই।”