নোয়াখালীতে জেলা শহরের মাইজদী বার্লিংটান মোড়ে একটি বাসায়। পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে টাকা নিয়ে টানাপোড়েনের কারণে মা ও মেয়েকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম।
এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার আলতাফ হোসেন (২৮) কে জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য মিলেছে। ঘটনায় গ্রেফতার আলতাফ লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর বাদাম ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের আব্দুল মুনাফের বাড়ির মৃত আবুল কালামের ছেলে। তিনি ওমান প্রবাসী ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আসামি পুলিশের কাছে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানায়। এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুড়ির কভার আলতাফের মেস থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি। বুধবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত নুরুনাহার (৪৫)ও মেয়ে ফাতেমা আক্তার প্রিয়ন্তি(১৬)। নিহতেরা ফজলে আজিম কচির স্ত্রী ও মেয়ে বলে জানাগেছে। ঘটনার সময় ফজলে আজিম কচির তার ছেলে কে নিয়ে বাহিরে ছিলেন। হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় দোকানিরা আটক করে ফেলে আলতাফ কে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় মমতাজ ফার্মেসির মালিক আমিন উল্যা জানান, তার ফার্মেসি ও বাসার পাশে একটি টয়লেটে যান তিনি। এসময় ওই বাসার দ্বিতীয় তলায় নারীর চিৎকার শুনে তিনি সিঁড়ি উঠার সময় দেখেন মেয়ে আহত অবস্থায় সিঁড়ির পাশে একটি রুমে পড়ে আছেন। এসময় এক যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি ধরলে, সে পালিয়ে যাওয়ার কালে অন্য দোকানিরা এগিয়ে এসে তাকে ধরে ফেলে। এ ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন, মুর্তাহিন বিল্লাহসহ থানা ও ডিবির বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলতাফ কে আটক করেন। অন্যদিকে পুলিশ মিহত নুরু নাহার এর স্বামী ফজলে আজিম কচির কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায় তার সাথে কারও কোন শত্রুতা নেই। বুধবার (১৪ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুনরায় টাকা চাওয়ার জন্য আসামি ভিকটিমের মাইজদী শহরের বার্লিংটন মোড়ের হক মঞ্জিলের বাসায় যান। তখন টাকা চাইলে ভিকটিম টাকা দিতে অস্বীকার করে। এনিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে টাকা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে আলতাফকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় ভিকটিম। একপর্যায়ে আসামিকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিতে উদ্যত হয়। এতে আসামি আলতাফ ক্ষিপ্ত হয়ে তার সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে ভিকটিমকে তার রুমের ভেতরে উপর্যুপরি আঘাত করেন।ভিকটিমের মেয়ে ফাতেহা আজিম প্রিয়ন্তী (১৬) মায়ের চিৎকারের শব্দ শুনে মাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে আসামি আলতাফ তাকেও উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন। ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে প্রিয়ন্তী দৌঁড়ে নিচ তলার ভাড়াটিয়ার বাসার দরজায় ধাক্কা দিলে ভাড়াটিয়া দরজা খুলে দেয়। দরজা খোলার পর পরই প্রিয়ন্তী ডাইনিং রুমের মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ে। প্রিয়ন্তীর পিছু পিছু আসামি আলতাফ হোসেন দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। গুরুতরভাবে জখম প্রিয়ন্তীকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
নিহত নুরনাহার স্বামী একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত। ঘটনার সময় তিনি সকাল ৯ টার দিকে হাসপাতালে উদ্দেশ্য বাসা থেকে বেড় হন এবং কিছুক্ষণ পরে ছেলে বাহিরে চলে যান। ঘটনার সাড়ে দশটার দিকে খবর পেয়ে ছুটে এসে দেখেন এই হৃদয়বিদারক ঘটনা এদিকে ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে ভিকটিম নুর নাহার বেগম ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করে।এসপি জানান, নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।