এ বছর অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসা ও রাশিয়ার সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভকে। শুক্রবার (৮ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় নরওয়ের রাজধানী অসলোতে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শান্তিতে নোবেলজয়ী দুজনের নাম ঘোষণা করে নোবেল কমিটি। এ দুজন সাংবাদিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় সাহসী লড়াইয়ের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন।
নোবেল কমিটি এ দুজনকে এমন ভূমিকা রাখা সব সাংবাদিকের প্রতিনিধি হিসেবে অভিহিত করেছে। ১৯৩৫ সালের পর এই প্রথম শান্তিতে নোবেল পেলেন কোন দুজন সাংবাদিক । ১৯৩৫ সালে জার্মান সাংবাদিক কার্ল ফন অসিয়েতস্কি প্রথম সাংবাদিক হিসেবে শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন।
মিসেস রেসার নিউজ অর্গানাইজেশন, ‘র্যাপলার’, যা ২০১১ সালে একটি ফেসবুক পেজ হিসেবে শুরু হয়েছিল, ফিলিপাইনের খুব কম সংস্থার মধ্যে একটি ছিল, যা প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের সরকারের প্রকাশ্যে সমালোচনা করে, মাদকের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধের অংশ হিসেবে পুলিশ কর্তৃক গৃহীত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রকাশ করে। মিসেস রেসা, যিনি অন্যান্য বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে ২০১৮ সালে টাইম ম্যাগাজিনের ব্যক্তি হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন।
মুরাতভের ‘নভায়া গাজেতা’ পত্রিকার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও টানা দুই যুগের প্রধান সম্পাদক মুরাতভ প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কয়েক দশক ধরে রাশিয়ায় বাকস্বাধীনতা রক্ষায় লড়াই চালিয়ে আসছেন। মুরাতভ এবং তার সংবাদপত্র দীর্ঘদিন ধরে অন্যায় কাজ তদন্ত ও প্রকাশের জন্য পরিশ্রম করেছেন। ২০১৪ সালে নোভায়া ইউক্রেনে রাশিয়ান সমর্থিত জঙ্গিদের দ্বারা মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ ১৭ কে গুলি করে মারার গল্প ছিঁড়ে ফেলেছিল এবং তারপরে রাশিয়ার পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা তার প্রথম পাতায় প্রকাশ করেছিল। গত তিন দশকে সংবাদপত্রের ছয়জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। মার্চ মাসে সংবাদপত্রের কার্যালয়ে ভয় দেখানোর প্রচেষ্টায় বিষাক্ত পদার্থ ছিটানো হয়েছিল। রাজ্যের কয়েক ডজন রাশিয়ান সাংবাদিককে “বিদেশী এজেন্ট” হিসাবে মনোনীত করা হয়েছে। কাগজের অন্যতম প্রতিবেদক পাভেল ক্যানগিন বলেন, “আমরা এমন এক ধরনের চাপের সম্মুখীন হচ্ছি, যা আমরা আগে কখনও অনুভব করিনি।”
মারিয়া রেসার ১৯৬৩ সালের ২ অক্টোবর ফিলিপাইনের ম্যানিলায় জন্ম গ্রহন করেন। আর দিমিত্রি আন্দ্রেইভিচ মুরাতভের রাশিয়ায় সামারায় ১৯৬১ সালে জন্ম গ্রহন করেন।
সাংবাদিকদের পক্ষে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। নিউইয়র্ক ভিত্তিক একটি এনজিও কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টসের মতে, ২০২০ সালে, ২০১৯ সালের মতো তাদের কাজ করার জন্য দ্বিগুণেরও বেশি লোককে হত্যা করা হয়েছিল। একই সংস্থার মতে, ২০২০ সালের শেষে ২০০ জনেরও বেশি সাংবাদিক কারাবন্দী ছিলেন। এটি ছিল তাদের বার্ষিক আদমশুমারিতে রেকর্ড করা সর্বোচ্চ সংখ্যা, যা প্রায় তিন দশক ধরে চলে আসছে। দু’জন সাংবাদিক এ কঠিন সময়ে অসাধারণ কাজ করেছেন এবং নোবেল কমিটি এ মর্যাদাপূর্ণ নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ায় প্রশংসার দাবি রাখে।
সুইডিশ বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী ও মানবহিতৈষী আলফ্রেড নোবেল যে পাঁচটি পুরস্কারের প্রবর্তন করেছিলেন এটি তার একটি। ১৯০১ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী শান্তিপ্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। মনোনীত ৩২৯ জনের মধ্য থেকে বিজয়ী এ দুই সাংবাদিক ১০ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা (১১ লাখ ডলার) পাবেন এবং তা সমান ভাগ হবে। মাঝে বিশ্বযুদ্ধের বছরগুলোতে পুরস্কার দেওয়া বন্ধ ছিল। ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ১০১ বার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। আর এ পুরস্কার জিতে নিয়েছেন ১৩৫ বিজয়ী, যাদের মধ্যে রয়েছেন ১০৭ জন ব্যক্তি ও ২৮টি প্রতিষ্ঠান। এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি তিনবার শান্তিতে নোবেল পেয়েছে রেড ক্রস । ২০১৪ সালে সর্বকনিষ্ঠ নোবেল বিজয়ীর স্বীকৃতি পান পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই। ইথিওপিয়ার ক্ষুদ্র প্রতিবেশী ইরিত্রিয়ার সঙ্গে শান্তি চুক্তি আনতে ভূমিকা রাখার জন্য ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদকে ২০১৯ সালে দারুণ ধুমধাম করে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। ২০২০ সালে পুরস্কারটি পেয়েছিল জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।