দুই বাংলায় সমান জনপ্রিয় বাংলা ভাষার একজন ভারতীয় বাঙালি প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুমদার আর নেই। সোমবার ৮ মে ২০২৩ কলকাতার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে কলকাতার একটি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
খবরটি নিশ্চিত করেছেন সমরেশ মজুমদারের বড় মেয়ে দোয়েল মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘বাবা আর নেই। বিকেলে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। গত দু’-তিন দিন তার অবস্থার অনেকটা উন্নতি ঘটে। আমরাও খুব আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু আজ তার একটি মেজর কার্ডিয়াক অ্যাটাক হয়। সেখান থেকে আর উন্নতি হয়নি তার।’
দোয়েল মজুমদার আরো বলেন, ‘বাবার মরদেহ কাল সকালে শ্যামপুকুরের বাড়িতে কিছুক্ষণ রাখা হবে। এরপর সেখান থেকে বালিঘাটে নেওয়া হবে শেষকৃত্যের জন্য।’
সমরেশ মজুমদার দুই সপ্তাহ আগে ফুসফুস ও শ্বাসনালি সংক্রমণের কারণে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার রক্তে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রাও বেড়ে গিয়েছিল। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। গত শনিবার তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটে। ভ্যান্টিলেশন সাপোর্টও খুলে রাখা হয়।
উল্লেখ্য, ৭৯ বছর বয়সী এই সাহিত্যিকের শ্বাসনালিতে গভীর সংক্রমণ ছিল।
তিনি ১৯৪২ সালের ১০ই মার্চ পশ্চিমবঙ্গের গয়েরকাটায় জন্মগ্রহণ করেন।
তার শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের গোয়েরকাটা চা বাগানে। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় জলপাইগুড়ি জেলা স্কুল থেকে। তিনি কলকাতায় আসেন ১৯৬০ সালে। বাংলায় স্নাতক সম্পন্ন করেন কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
সমরেশ মজুমদারের প্রথম উপন্যাস “দৌড়” ছাপা হয়েছিলো দেশেই ১৯৭৫ সালে গৌচপ্রম ছদ্মনামে। তিনি শুধু তাঁর লেখনী গল্প বা উপন্যাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি; ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি থেকে গোয়েন্দাকাহিনি, কিশোর উপন্যাস লেখনীতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। তাঁর প্রত্যেকটি উপন্যাসের বিষয় ভিন্ন, রচনার গতি এবং গল্প বলার ভঙ্গি পাঠকদের আন্দলিত করে। চা বাগানের মদেসিয়া সমাজ থেকে কলকাতার নিম্নবিত্ত মানুষেরা তাঁর কলমে উঠে আসেন রক্ত-মাংস নিয়ে। সমরেশ মজুমদারের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলির মধ্যে সাতকাহন, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান, গঙ্গা, ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, অনুরাগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ‘উত্তরাধিকার’, ‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’ সহ বহু জনপ্রিয় উপন্যাসের স্রষ্টা। তিনি বেশ কিছু সফল টিভি সিরিয়ালের কাহিনিকার। শহরকেন্দ্রিক জীবনের আলেখ্য বারবার উঠে এসেছে তার লেখায়। যে কারণে তাকে আপাদমস্তক ‘আরবান’ লেখক বলে অনেক সময় বর্ণনা করা হয়েছে।
অনেক অসাধারণ লেখনীর শব্দের এই রূপকার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কার অর্জন করেছেন। ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে সাহিত্য আকাদেমী পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইয়াইএমএস পুরস্কার জয় করেছেন। চিত্রনাট্য লেখক হিসাবে জয় করেছেন বিএফজেএ, দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির এওয়ার্ড। সমরেশ কলকাতা ও বাংলাদেশ এর সর্বকালের অন্যতম সেরা লেখক হিসাবে পাঠকমন জয় করেছেন।