দেশি ফলগুলো রঙে রসে, স্বাদে অনন্য। এমনি একটি ফল চালতা বা চালিতা বা চাইলতে। বাংলা নাম চালতা হলেও ইংরেজি নাম Elephant Apple এবং বৈজ্ঞানিক নাম Dillenia indica। । গাছটি দেখতে সুন্দর বলে শোভাবর্ধক তরু হিসাবেও লাগানো হয়ে থাকে। চালতার আদি জন্ম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। তবে সবচেয়ে বেশি জন্মে ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায়।
ফল টক বলে চালতার আচার, চাটনি, টক ডাল অনেকের প্রিয় খাদ্য। পাকা ফল পিষে নিয়ে নুন-লংকা দিয়ে মাখালে তা বেশ লোভনীয় হয়। চালতা ফলের যে অংশ খাওয়া হয় তা আসলে ফুলের বৃতি। প্রকৃত ফল বৃতির আড়ালে লুকিয়ে থাকে। ফল বাঁকানো নলের মত; ভিতরে চটচটে আঠাালোর মধ্যে বীজ প্রোথিত থাকে। চালতা অপ্রকৃত ফল; মাংসল বৃতিই ভক্ষণযোগ্য।
বর্ষার শুরুতে এ গাছ সবুজ পাতায় এবং ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। সবুজ পত্ররাজির মাঝে শুভ্র সাদা পাপড়ির ফুলগুলো অত্যন্ত আকর্ষণীয় দৃশ্যের সৃষ্টি করে। বর্ষার প্রথমভাগে চালতা গাছে ফুল ফোটে এবং শেষভাগ থেকে গাছে ফল ধরে। শীতকাল পর্যন্ত এ ফল পাওয়া যায়। চালতা গাছে ফল আসার কিছু দিন পর থেকেই অর্থাৎ কচি অবস্থাতেই ফল খাওয়ার উপযোগী হয়। পাকা ফলের বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়। গাছে ফল পাকলে যদি তা না পাড়া হয় তবে সে ফল থেকে বীজ আপনাআপনি মাটিতে ঝরে পড়ে; অনুকূল পরিবেশে তা থেকে চারা গজায়। এজন্য চালতা তলায় প্রায়শ: ছোট ছোট অনেক চারা দেখা যায়। এসব চারা তুলে বাগানে লাগিয়ে দিলেও গাছ হয়। তবে বীজ থেকে করা চারার গাছ ফল ধরতে ৬-৭ বছর লেগে যায়। গাছ বাঁচে কম-বেশি ২৫-৩০ বছর। শাখা কলম বা কাটিং করেও চালতার চারা তৈরি করা যায়। সেসব কলমে দ্রুত ফল ধরে। চালতার গাছ আকারে উচ্চতায় ২০ মিটারের চেয়ে বেশী হতে পারে। বৃহৎ আকারের এই গাছে ফলের ব্যাস হয় ৮-১২ সে.মি.।
চালতার পুষ্টিগুণঃ
চালতায় প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ, ভিটামিন, বিটা ক্যারোটিন এবং সামান্য পরিমাণ আমিষ ও শর্করা রয়েছে। তাই চালতা মানবদেহে যেমন রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে, তেমনি পুষ্টি পূরণেও রাখে বিশেষ ভূমিকা।
প্রতি ১০০ গ্রাম চালতা ফলে রয়েছে:
আমিষ ০.৮ গ্রাম,শ্বেতসার ১৩.৪ গ্রাম,চর্বি ০.২ গ্রাম,খনিজ লবন ০.৮ গ্রাম,ক্যালসিয়াম ১৬ মি.গ্রা.,খাদ্যশক্তি ৫৯ কিলো ক্যালরী।
চালতার স্বাস্থ্য উপকারিতা:
- চালতা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- চালতায় রয়েছে ৬৯ ভাগ খাদ্যশক্তি ,যা প্রানীদেহে কর্মক্ষমতা বাড়াতে সহযোগীতা করে।
- চালতা হাড়,দাঁত ও নখ গঠনে সহযোগিতা করে।
- ডায়রিয়া ও বদহজমে চালতা বেশ ভালো কাজ করে।
- গলা ব্যথা, বুকে কফ জমা, সর্দি-কাশি ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে চালতার আছে অনন্য গুণ।
- কুসুম গরম পানিতে চালতার রস এবং আখের গুঁড় মিশিয়ে খেলে রক্ত পরিষ্কার হয়।
- কিডনির রোগ প্রতিরোধে চালতা খুব ভালো কাজ করে ।
- হৃদযন্ত্র এবং যকৃৎ ভালো রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান আছে চালতায়।
- হাড়ের সংযোগ স্থলের ব্যথা কমাতে এই ফলটি ভালো কাজ করে।
- চালতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’। সে কারণে স্কার্ভি রোগ থেকে সুরক্ষা পেতে সাহায্য করে।
- রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে চালতা।
- চালতায় রয়েছে বিশেষ ধরনের কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
- চালতায় থাকা আয়রন রক্তের লোহিতকণিকার কার্যক্রমে সহায়তা করে। রক্তের সংবহন ঠিক রাখে।