বৃহস্পতিবার রাতে চলে গেলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম রাজনীতিবিদ, দীর্ঘদিনের মন্ত্রী, কলকাতার সাবেক মেয়র, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক গুরু সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছিলেন বর্ণময় চরিত্রের। কিছুদিন হলো তিনি অসুস্থ ছিলেন। বৃহস্পতিবার ( ৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় তিনি স্টেন্ট থ্রম্বোসিসে আক্রান্ত হন। রাত নয়টা ২২ মিনিটে তিনি মারা যান।
একসময় আলোড়ন তোলা ছাত্রনেতা ছিলেন সুব্রত। প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছাত্রনেতা হিসাবে পশ্চিমবঙ্গে ঝড় তুলেছিলেন। মাত্র ২৬ বছর বয়সে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হয়েছেন। তারপর থেকে এতদিন তার রাজনৈতিক জীবন ছিল বৈচিত্রপূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসি রাজনীতিতে একসময় প্রিয়-সুব্রত-সোমেনের নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হতো। প্রিয় ও সোমেন আগেই চলে গেছেন। এবার গেলেন সুব্রত।
গত শতকে ছয়ের দশকের শেষ এবং সাতের দশকের শুরু ছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির টালমাটাল সময়। অতি-বাম নকশাল আন্দোলনে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ। তার পাশাপাশি সিপিএমের উত্থান এবং প্রিয়-সুব্রতদের উঠে আসা। ১৯৭২ সালে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের নেতৃত্বে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে। সেইসময় প্রচারে প্রিয়র সঙ্গে ঝড় তুলেছিলেন সুব্রত। তখন দুইজনে একসঙ্গে ঘুরতেন। বক্তা হিসাবে প্রিয় ছিলেন অসাধারণ। কিন্তু সুব্রতও কম যেতেন না। শুধু তাদের দেখতে ও শুনতে মানুষ ভিড় করত।
প্রিয় চলে আসেন জাতীয় রাজনীতিতে, সুব্রত থেকে যান বাংলার রাজনীতিতে। কখনো তিনি দিল্লিতে এসে রাজনীতি করতে উৎসাহ দেখাননি। অথচ, ইন্দিরা গান্ধী তাকে খুবই পছন্দ করতেন। কিন্তু জাতীয় রাজনীতির জায়গাটা তার প্রিয়দাকে দিয়ে নিজে রাজ্যেই আবদ্ধ থেকেছেন। সেই সুব্রত মাত্র ২৬ বছর বয়সে রাজ্যে মন্ত্রী হন। ৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী যখন দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন, তখন সুব্রত ছিলেন রাজ্যের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী।
তিনি অভিনয় জগতেও কম পরিচিত ছিলেন না। রাজনীতিকের পাশাপাশি তিনি একজন দক্ষ অভিনেতাও ছিলেন তিনি। সে অবশ্য কয়েক দশক আগের কথা। দূরদর্শনের সিরিয়ালে অভিনয় করেছিলেন সুব্রতবাবু। সেই ধারাবাহিকের নাম ‘চৌধুরী ফার্মাসিউটিক্যালস’। সুব্রতর বিপরীতে মুনমুন সেন। তখনকার ডাকসাইটে সুন্দরী। লাস্যময়ীর বিপরীতে কম যান না সুব্রতও। সেই সময়ে পুরোদমে রাজনীতি করছেন। সেই বহুল চর্চিত সিরিয়াল বাঙালির অন্দরমহলে অবশ্য বেশিদিন টেকেনি। তবে টিকে গিয়েছে সুব্রত-মুনমুনের বন্ধুত্ব। চার দশক পেরিয়েও রাজনীতি, অভিনয় ছাপিয়ে দুজনের ঘরোয়া বন্ধুত্ব। দুই পরিবারেরও বেজায় সখ্যতা। একসঙ্গে রাজনীতিও করেছেন। তৃণমূলে ছিলেন দুই তারকা। সেই ‘সুব্রতদা’ আর নেই! কিছুতেই মানতে পারছেন না মুনমুন সেন । সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বারবার আটকে যাচ্ছে কথা। বললেনও, ’কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।’তাই একবারটি সেই বন্ধু-দাদা সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে শেষ দেখা দেখতে পৌঁছে গিয়েছেন রবীন্দ্রসদনে। রাজনীতিকের মরদেহে মাল্যদান করলেন। কপালে বুলিয়ে দিলেন হাতও। আর তো এই মানুষটার সঙ্গে আড্ডা জমবে না। ভেবেই শোকাহত অভিনেত্রী। হাত জোর করে নমস্কারও করলেন।