Wednesday, September 18, 2024
No menu items!
প্রথম পাতা‘গডফাদার’ খ্যাত নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন হাজারী আর নেই

‘গডফাদার’ খ্যাত নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন হাজারী আর নেই

সালেহ রিজওয়ান সামিন

রাজনৈতিক জীবনের পুরো সময়টুকুই আলোচনা আর সমালোচনায় ছিলেন ফেনীর এক সময়ের ‘গডফাদার’ খ্যাত নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন হাজারী।

১৯৪৫ সালের ২৪ আগস্ট ফেনী শহরের সহদেবপুরের হাবিবুল্লাহ পণ্ডিতের বাড়িতে আব্দুল গণি হাজারী ও রিজিয়া বেগমের সংসারে জন্ম নেন জয়নাল হাজারী। সোমবার বিকাল ৫টার দিকে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

আলোচিত জয়নাল আবেদীন হাজারী ছিলেন একজন রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ১৯৭১ সালে ২ নং সেক্টরের অধীনে ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের পরামর্শে রাজনগর এলাকায় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর রাজনগরে গিয়ে ওই এলাকার বেকার যুবকদের নিয়ে তিনি একটি সিভিল ডিফেন্স টিমও গঠন করেছিলেন।

জয়নাল হাজারী ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় বিশ বছরের বেশি সময় ধরে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-২ (ফেনী সদর) আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে তিনবার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। তার অসুস্থতার জন্যে চিকিৎসা ব্যয় হিসেবে ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ত্রাণ তহবিল থেকে হাজারীকে ৪০ লাখ টাকার অনুদান প্রদান করে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। ফেনীর রাজনীতিতে কয়েক দশক ধরে ব্যাপকভাবে আলোচিত ফেনীর আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারী চির প্রস্থানের পথে যাত্রা করেছেন। জীবনের শেষ দিনগুলোতে অনেকটা নিভৃতচারী হয়ে উঠলেও আলোচনা ও বিতর্ক তাকে পিছু ছাড়েনি। রাজনীতিতে নামিদামি থেকে শুরু করে জনসাধারণ পর্যায়ে বহু মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিলেও ব্যক্তিগত জীবনে কোনো সঙ্গিনীর বাহুডোঁরে বাঁধা পড়া হয়নি তার। বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিকদের ৫০ পেরোনো বয়সে বিয়ে ও ঘর-সংসার করতে দেখা গেলেও এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আমৃত্যুই ছিলেন ‘চিরকুমার’। কিন্তু কেন তার এই একলা যাপন? কেন চার হাত এক হয়নি তার? কেনইবা কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেননি? সদ্য মারা যাওয়া জয়নাল হাজারীর অবিবাহিত জীবন নিয়ে রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে জনমানুষের মধ্যে কৌতূহলে কখনোই ভাটা পড়েনি। তিনি নিজেও গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে একাধিকবারই ব্যক্তিগত জীবনের বাহাস শুনিয়েছেন। তবে চিরকুমার জয়নাল হাজারী কখনোই অবিবাহিত জীবনকে কোনো ‘গ্যাপ বা শূন্যতা’ হিসেবে স্বীকার করেননি। বিয়ে না করার পেছনে ‘বিজু’ নামের এক তরুণীর সঙ্গে এই রাজনীতিকের সম্পর্ক ও বিচ্ছেদের কাহিনি অনেকবারই সামনে এসেছে। নিজের লেখা ‘বিজুর বিচার চাই’ নামের বইতেও ওই নারীর সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবনের নানা মুহূর্ত উঠে আসে। বইটি ব্যাপক আলোচনায় এসেছিল।

বিজু নামে একটা মেয়ের সাথে প্রেম ছিলো। মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার আগে দুইজন কমিটমেন্ট করেছিলেন যুদ্ধ শেষ হলে বিয়ে করবেন। যুদ্ধ শেষ হলো, রণাঙ্গন থেকে ফিরে আসার পর ছেলেটা জানতে পারলো বিজু নামের মেয়েটি অন্য আরেকটা ছেলেকে বিয়ে করে ফেলেছে। সারা ফেনী শহর “বিজুর বিচার চাই” প্লেকার্ড দিয়ে ভরিয়ে দিলেন।

প্রতারিত হলেও তিনি বিজুর কোন ক্ষতি করেননি। তার যে ক্ষমতা-প্রতিপত্তি ছিলো, চাইলেই জোর করে বিজুকে তুলে আনতে পারতেন অথবা তার সংসার ভেংগে দিতে পারতেন। কিন্তু না তিনি তার ভালবাসার অমর্যাদা করেননি। সেই বিজুর জন্যই সারাজীবন চিরকুমার রয়ে গেলেন। আর অপেক্ষা করতে হবে না।

১৯৮৪ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা ২০ বছরের বেশি সময় ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা জয়নাল হাজারী ফেনী-২ (সদর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে একাধিকবার এমপি নির্বাচিত হন। তিনি ‘হাজারিকা প্রতিদিন’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক ছিলেন। বিয়ে না করা প্রসঙ্গে ক’বছর আগেই জয়নাল হাজারী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, এটা আমার রাজনৈতিক জীবনে কোনো ‘গ্যাপ’ নয়। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যদি বলি- অনেক বাম রাজনীতিক যারা কমিউনিস্ট বা কংগ্রেস পার্টি করতেন তারা বিয়ে করেননি। আর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যদি দেখি পৃথিবীর অনেক দার্শনিক, বিজ্ঞানীও বিয়ে করেননি, বিয়ে নিয়ে চিন্তাও করেননি। বিয়ে হলো কি হলো না, চিরকুমার থাকলাম কি থাকলাম না- এটি রাজনীতির কোনো বাঁধাও নয়, পরিপূরকও নয়।

প্রকৃতির নিয়মেই মানুষটি পাড়ি দিলেন না ফেরার দেশে। ওপারে ভালো থাকবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে জনপ্রিয় খবর

সাম্প্রতিক মন্তব্য