Monday, October 14, 2024
No menu items!
আরোধর্ম ও জীবনখেজুর ও এর উপকারী গুণ

খেজুর ও এর উপকারী গুণ

মানব সভ্যতার ইতিহাসে সুমিষ্ট ফল হিসেবে খেজুরের গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ায় অনেক বছর পূর্ব থেকেই এর চাষাবাদ হয়ে আসছে। এ গাছটি প্রধানতঃ মরু এলাকায় ভাল জন্মে। কোরআন শরিফ প্রথম লেখা হয়েছিল খেজুর গাছের পাতায়। এক ধরনের তালজাতীয় শাখাবিহীন বৃক্ষ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ফিনিক্স ড্যাকটিলিফেরা (Phoenix dactylifera) আর ইংরেজিতে Date Palm বলে। খেজুর গাছের ফলকে খেজুররূপে আখ্যায়িত করা হয়। খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু ও বেশ পরিচিত একটি ফল। যা ফ্রুকটোজ এবং গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ। খেজুর ফলকে চিনির বিকল্প হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। চারটি বা ৩০ গ্রাম পরিমাণ খেজুরে আছে ৯০ ক্যালোরি, এক গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২ দশমিক ৮ গ্রাম ফাইবার। এছাড়াও খেজুরের রয়েছে আরও অনেক পুষ্টি উপাদান।

আমরা অনেকেই জানি খেজুর খাওয়া সুন্নত। শুধু রমজান মাসে কেন, বছরজুড়েই খাদ্য তালিকায় থাকুক খেজুর। খেজুরে আছে প্রাকৃতিক শর্করা। আর দুধকে বলা হয় সুপার ফুড বা সর্বগুণ সম্পন্ন খাবার। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, সি,ভিটামিন বি-১২, নিয়াসিন ও রিবোফ্লভিন । এই দুই একসঙ্গে খেলে তার পুষ্টিগুণও বেড়ে যায়। শরীর দুর্বল লাগা, মাথা ঘোরা এমন সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন সহজেই। প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস গরম দুধে দু’টি খেজুর মিশিয়ে খেতে হবে। এছাড়া খেজুরের মধ্যে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে। মন ভালো রাখতেও কার্যকরী দুধ ও খেজুর। সকালে খালি পেটে খেজুর খেলেও অনেক উপকার হয়।

আল্লাহ বলেন, ‘আমি জমিনে উৎপন্ন করেছি শস্য-দ্রাক্ষী, শাক-সবজি, জয়তুন ও খেজুর বৃক্ষ।’ সূরা-আবাসা, আয়াত : ২৭।
‘খেজুর ও আঙ্গুর ফল থেকে তোমরা সাকার ও উত্তম খাদ্য তৈরি কর। নিঃসন্দেহে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে।’ সূরা- নাহাল, আয়াত : ৬৭, এ ছাড়া সূরা আনআমের নিরানব্বই নম্বর এবং সূরা মরিয়মের তেইশ নম্বর আয়াতেও খেজুরের উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে।

খেজুর সম্পর্কে রাসূল (সা) কি বলেছেন- হজরত সায়ীদ (রা.) বর্ণনা করেন, একদা আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে রসুলে পাক (সা.) আমাকে দেখতে তাশরিফ নিয়ে এলেন। রসুলে পাক (সা.) পবিত্র হাতের শীতলতা আমার অন্তর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। অতঃপর রসুলে আকরাম (সা.) এরশাদ ফরমালেন- ‘তুমি অন্তরে কষ্ট অনুভব করছ। তুমি হারেস ইবনে কালদাহ সাকি্বফীর কাছে যাও। কারণ সে একজন চিকিৎসক। সে যেন মদিনার সাতটি আজওয়া খেজুর নিয়ে বীজসহ পিশে তোমার মুখে ঢেলে দেয়।’ -আবু দাউদ, মিশকাত।

হজরত সাদ রাদিয়াআল্লাহু আনহু একবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দেখতে যান এবং হৃদরোগের চিকিৎসার নসিহত পেশ করেন- হজরত সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দেখতে এসেছিলেন। তিনি আমার বুকের ওপর হাত রাখলেন তখন আমি হৃদয়ে শীতলতা অনুভভ করলাম।তিনি বলেন, তোমার হৃদরোগ হয়েছে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে আজওয়া খেঁজুর খেতে দিয়ে বললেন, তুমি সাতদিন আজওয়া খেজুর খাবে তাহলে তুমি পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে।’ (আবু দাউদ)।
খেজুরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া হৃৎপিণ্ডের সবচেয়ে নিরাপদ ওষুধ খেজুর।

খেজুরের রয়েছে আরও অনেক উপকারী গুণ। সেগুলো হলো-

  • কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজমের সমস্যা দূর করে।
  • পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ও প্রাকৃতিক আঁশে পূর্ণ খেজুর ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
  • খেজুরে থাকা আয়রন ও ফাইবার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
  • প্রচুর পটাসিয়াম পাওয়া যায় খেজুর থেকে।
  • এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • মাত্র কয়েকটি খেজুর ক্ষুধার তীব্রতা কমিয়ে দেয় এবং পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। অল্পতেই শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরণ করে।
  • মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায় খেজুর। বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য খেজুর খুবই উপকারী। এটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। গ্লুকোজের পাশাপাশি প্রাকৃতিক চিনি পাওয়া যায় খেজুর থেকে যা এনার্জি বাড়ায়।
  • খেজুরে থাকা ভিটামিন সি ও ডি ত্বক ভালো রাখে।
  • দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতেও এই খেজুর দুধ খেতে পারেন। এছাড়াও চোখে অঞ্জনির সমস্যায়, যারা একটানা কম্পিউটারের সামনে কাজ করেন তাদের জন্য খেজুর দুধ উপকারী। খেজুর দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে রাতকানা প্রতিরোধেও সহায়ক।
  • খেজুর বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্য সমৃদ্ধ এক খাবার, যা মায়ের দুধের পুষ্টিগুণ আরও বাড়িয়ে দেয় এবং শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়ক। আর খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা হাড়কে মজবুত করে।
  • যকৃতের সংক্রমণে খেজুর উপকারী।
  • গলাব্যথা এবং বিভিন্ন ধরনের জ্বর, সর্দি ও ঠাণ্ডায় বেশ কাজ দেয়।
  • অন্ত্রের কৃমি ও ক্ষতিকারক পরজীবী প্রতিরোধে খেজুর বেশ সহায়ক। অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে।
  • খেজুর শিশুদের মাড়ি শক্ত করতে সাহায্য করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডায়রিয়াও প্রতিরোধ করে।

তবে খেজুরের অসংখ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষত্রে খেজুর গ্রহনে সতর্ক হওয়া উচিত। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা খেজুর গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন এবং যাদের দেহে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি তারা খেজুর খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সবচেয়ে জনপ্রিয় খবর

সাম্প্রতিক মন্তব্য