সবুজ পাহাড়ের বুক জুড়ে সোনালি ধানের হাসির পাশাপাশি হাসছেন জুমিয়া কিষান-কিষানিরা। জুমিয়দের চোখে-মুখে আনন্দের উচ্ছ্বাস বইরছ। ধুম পড়েছে জুমে ধান কাটার । তাই তো ব্যস্ত সময় পার করছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকেরা। সবাই উৎফুল্ল মনে জুমের পাকা ধান সংগ্রহ করছেন। একই সঙ্গে ধুম পড়েছে মারফা, বেগুন, ধানিমরিচ, ঢেঁড়স, কাঁকরোল, কুমড়াসহ বিভিন্ন ধরণের সবজি জাতীয় ফসলের। খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রে জানাযায়, খাগড়াছড়িতে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবিকার প্রধান উৎস জুম চাষ। বাংলাদেশে শুধু পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটির ও বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকেদের পাশাপাশি কিছু বাঙ্গালীরাও চাষাবাদ করে থাকে।
জুম চাষ পাহাড়ি এলাকায় প্রচলিত এক বিশেষ ধরনের কৃষিপদ্ধতি। “জুম চাষ” অনেকের কাছে “ঝুম চাষ” নামেও পরিচিত। মূলত “ঝুম চাষ” এক ধরনের স্থানান্তরিত কৃষিপদ্ধতি। সাধারণত এটি জঙ্গল কেটে পুড়িয়ে চাষ করা হয়, আবার সেই স্থানে জমির উর্বরতা কমে গেলে পূর্বের স্থান হতে কৃষি জমি স্থানান্তরিত করে অন্যত্র আবার কৃষি জমি গড়ে ওঠে। পাহাড়ের গায়ে ঢালু এলাকায় এই চাষ করা হয়। এর ফলে এই পদ্ধতিতে চাষ করে বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়। মূলত জুম চাষ পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের জীবন জীবিকার প্রধান অবলম্বন।
অল্প কথায় বলতে গেলে কিছু বছর পাহাড়ের গায়ে, কিছু স্থানে চাষ করে সেই স্থানকে উর্বরতা বৃদ্ধি করার জন্য রেখে দিয়ে, আবার পাহাড়ের অন্য স্থানে গিয়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে চাষাবাদ করাই হলো জুম চাষ।
বছর শেষে, পৌষ-মাঘ মাসে পাহাড়ের ঢালে গাছগাছালি পরিষ্কার করে পুড়ে জুম চাষের উপযোগী করে তোলা হয় স্থানটি। পরবর্তিতে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে জুমের মাটিতে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে বিভিন্ন রকম বীজ বপন করা হয়। ধান পাকে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে। তবে একটি স্থানে একবারই জুম চাষ করা হয়। পরের বছর জুম চাষ করার জন্য নতুন পাহাড় খুঁজে নেন জুমচাষিরা। তবে জুম চাষিরা বলছেন পাহাড়ে ফলজ বাগান বেড়ে যাওয়ায় আগের মত পাহাড়ি খালি জমি পাওয়া যায় না। তাই দিন দিন জুম চাষের জমি কমে যাচ্ছে।
Good news