মহাকালের স্বাক্ষী
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর যেকোনো ধরনের হামলা বরদাস্ত করবে না আওয়ামী লীগ। দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যখন তাদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উদযাপন করছে তখন এ দেশের চিহ্নিত সাম্প্রদায়িকগোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব সৃষ্টি ও মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর যেকোনও প্রকার হামলা বরদাস্ত করা হবে না।’
সম্প্রতি কুমিল্লার একটি মণ্ডপে অপ্রীতিকর ঘটনার পর পাশের চাঁদপুরসহ আরও কয়েকটি জেলায় প্রতিমা ভাঙচুরসহ কিছু বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। এরপরই সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে দায়ীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। একইসঙ্গে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, পবিত্র গ্রন্থকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়ানোসহ যারা ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে’র চেষ্টা করবে তাদেরও আইনের মুখোমুখি হতে হবে।
এদিকে কুমিল্লার ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে বিভিন্নজন তাদের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করেছেন।
ফেসবুক ব্যবহারকারী ইমরান এইচ খান রাজিব বলেন, “প্রকৃত মুসলিম নিজ ধর্মগ্রন্থ কখনই পূজা মন্ডপে রেখে কোরআন-এর অবমাননা করবে না। আবার প্রকৃত হিন্দু কখনই তার প্রতীমার সামনে মুসলিম ধর্ম গ্রন্থ রেখে নিজ প্রতীমার অবমাননা করবে না। দুষ্কৃতিকারী হিন্দুও নয় মুসলিমও নয় কেবলই দুষ্কৃতিকারি। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বী নির্যাতিত ও নিপীড়িত ভাবার কোন কারণ নেই। মূলত হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি আজ আসলে নিপীড়িত।
আজ এদেশে পূজা মন্ডপ যেমন বন্ধ হচ্ছে; তেমনি ভারতে কুরবানিও বন্ধ হয়ে যায়।
আর এসবের মূলে না থাকে হিন্দু না থাকে মুসলিম। থাকে কতিপয় সুক্ষ সুবিধালোভী কিছু অমানুষ। কুচক্রী রাজনীতির দাবার ঘুটি মাত্র আমরা সার্বজনীন মানুষ!!!
ধর্মের নামে এই অনুভূতিতে আঘাত আঘাত খেলা তো আদিম খেলা; তবুও কেন আমরা বুঝেও বুঝি না?? “
আর একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী কামরুল হাসান বলেন, “একটা পাগলেও বুঝার কথা কুমিল্লার ঘটনাটি স্পষ্টত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।কোনো সাধারণ হিন্দু বা মুসলিম এমন ঘটনা ঘটানোর দুঃসাহস কখনোই করবে না। এটা যেহেতু খুবই স্পর্শকাতর খুবই বিষয় এতে সাধারণ মুসলিমরা প্রতিবাদ করতেই পারে এবং করাটাই স্বাভাবিক কিন্তু এ প্রতিবাদের নাম করে হিন্দুদের মন্দির, প্রতিমা ও পূজামণ্ডপ ভাংচুর করার কোনো মানেই হয় না। এটা পুরোপুরি একটা কাপুরুষোচিত কাজ। হিন্দুদের সংখ্যা এদেশে খুবই কম, তাদের সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের মুসলিমদেরই নিতে হবে, ইসলাম আমাদের এটাই শিক্ষা দেয়। পার্শ্ববর্তী দেশে কী হচ্ছে এমন উদাহরণ দিয়ে হিন্দুদের সাথে খারাপ আচরণ আমরা কখনোই করতে পারি না। ঈদ যেমন আমাদের বড় একটি ধর্মীয় উৎসব যেখানে আমাদের প্রচুর আবেগ-অনুভূতি থাকে ঠিক তেমনি শারদীয় পূজাও হিন্দুদের একটি বড় উৎসব এতে উনাদেরও আমাদের মতো আবেগ-অনুভূতি কাজ করে। হিন্দুরা যাতে সুন্দর ও সুচারুভাবে পূজা উদযাপন করতে পারে সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও যারযার অবস্থানে থেকে সাধ্যমতো সাহায্য করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।
আপনার কর্ম ও আচরণই প্রমাণ করবে আপনার ধর্ম কেমন। তাই অতিরঞ্জিত কোনো কিছু করে নিজের ধর্মকে গালি শুনাবেন না দয়া করে।
কেউ আপনাকে গালি দিলো তারপর আপনিও তাকে গালি দিলেন তারপর আপনি আবার এর বিচার চাচ্ছেন বিষয়টা কেমন হয়ে গেলো না! সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি কুমিল্লাতে হিন্দু-মুসলিম কত সুন্দরভাবে মিলেমিশে চলাফেরা করছে, চোখের সামনে কখনো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেখি নি,সেই কুমিল্লাতে এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে তা এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। হিংসা, প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষ বন্ধ করে যারযার ব্যবহার, কর্ম ও উত্তম আচরণ দিয়ে প্রমাণ করুন আপনি আপনার ধর্মের জন্য কতটুকু আন্তরিক ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চলুন হিন্দু মুসলিম আমরা সকলেই সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করি ও সংযত আচরণ করার চেষ্টা করি এবং যারযার ধর্মের নির্দেশনা গুলি সঠিক পথে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি।”