ইলিশ (Hilsa) বাংলাদেশের জাতীয় মাছ । ইলিশের দেহ বেশ চাপা ও পুরু। মাথার উপরিতল পুরু ত্বকে ঢাকা থাকে। দেহ রূপালি রঙের মাঝারি আকারের আঁশে আবৃত থাকে বলে একে রুপালি ইলিশও বলে। বড় আকারের ইলিশের ওজন হয় প্রায় ২.৫ কিলোগ্রাম । মেয়ে মাছ দ্রুত বাড়ে। সাধারণত মেয়ে ইলিশ পুরুষ ইলিশ থেকে আকারে বড় হয়। পুরুষ ইলিশ যেখানে আকারে ৩৫ থেকে ৪০ সেন্টিমিটারের মতো হয়ে থাকে, সেখানে ৪৬ সেন্টিমিটারের নিচে পরিণত কোনো মেয়ে ইলিশের খোঁজ মেলে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেয়ে ইলিশ আকারে ৫৫ থেকে ৬০ সেন্টিমিটারও হয়ে থাকে। জন্মের এক বছরের মধ্যেই পরিণত হয় এ মাছ। বিশেষ করে প্রথম বছরের শেষ কিংবা দ্বিতীয় বছরের প্রথম দিকে পূর্ণ পরিপক্বতা লাভ করে। ইলিশ দক্ষ সাঁতারু। এ মাছ ১-২ বছরে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। মূলত বাংলাদেশে তিন প্রজাতির ইলিশ পাওয়া যায়, Tenualosa. ilisha, T. toli এবং T. kelee। তবে এর মধ্যে T. ilisha অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়।
ইলিশের বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ : Animalia
পর্ব : Chordata
শ্রেণী : Actinopterygii
বর্গ : Clupeiformes
পরিবার : Clupeidae
গন : Tenualosa
প্রজাতি : T. ilisha
ইলিশের জীবনচক্র
১৯৮৭ সালে তৈরি একটি গবেষণাপত্রে থেকে জানা যায়, আকারে ২৬-২৯ সেন্টিমিটার হওয়ার পরই পুরুষ ইলিশ তার প্রথম পরিপক্বতা লাভ করে আর মেয়ে ইলিশ তাদের প্রথম পরিণত বয়সে পৌঁছে ৩১-৩৩ সেন্টিমিটার আকার হওয়ার পর। বলা যায়, সারাবছরই ডিম ছাড়ে। তবে তাদের প্রধান প্রজনন মৌসুম অক্টোবর-নভেম্বর এবংসম্পূরক সময়ের মধ্যে রয়েছে জুন-জুলাই ও ফেব্রুয়ারি-মার্চ ।
গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ভূমি অভিমুখে মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হতে শুরু হওয়ার সময়টা মূলত ইলিশের মূল প্রজনন মৌসুম। সে সময় ডিম ছাড়ার জন্য সমুদ্র থেকে মোহনা আর বড় নদীতে স্বাদুপানির স্রোতের উজানে অগভীর পানিতে উঠে আসে এবং ডিম ছাড়ে। মুক্ত ভাসমান ডিম থেকে পোনা বেরোয়। জাটকা ( অপ্রাপ্তবয়স্ক ইলিশের স্থানীয় নাম।) নদীর ভাটিতে নেমে সমুদ্রে পৌঁছে বড় হয়। এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত মেঘনা আর পদ্মা নদীতে জাটকার খোঁজ পাওয়া যায় । আকারে ৪ থেকে ১৬ সেন্টিমিটারের হলেই খাদ্য অনুসন্ধান আর পরিণত হতে এ জাটকা নদী থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়, পাড়ি দেয় সমুদ্রের দিকে। প্রাপ্তবয়স্ক ও প্রজননক্ষম হয়ে জীবনচক্র পূর্ণ করার জন্য আবার নদীতে ফিরে আসে। ইলিশ সারা বছর ডিম পাড়লেও সবচেয়ে কম পাড়ে ফেব্রুয়ারি-মার্চে ও সবচেয়ে বেশি অক্টোবর-নভেম্বরে।
ইলিশের প্রজননশক্তি
ইলিশের প্রজননশক্তি নির্ভর করে এর শরীরের আকার ও ওজনের ওপর। বড় আকারের একটি ইলিশ ২০ লক্ষ পর্যন্ত ডিম পাড়তে পারে।২৫ থেকে ৫৫ সেন্টিমিটার আকারের একটি ইলিশ আনুপাতিক হারে দশমিক ১ থেকে ২ মিলিয়ন ডিম ছাড়তে সক্ষম। একটি মেয়ে ইলিশের পূর্ণ পরিপক্ব ডিম্বাশয়ের ব্যাস দশমিক ৭ থেকে দশমিক ৯ মিলিমিটার।
ইলিশের আবাসস্থল
ইলিশের বিচরণক্ষেত্র সমুদ্র, মোহনা ও নদীতে। সমুদ্রে এরা পারস্য উপসাগর, লোহিত সাগর, আরব সাগর, বঙ্গোপসাগর, ভিয়েতনাম ও চীন সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। শাতিল আরব, ইরান ও ইরাকের ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস, পাকিস্তানের সিন্ধু, ভারতের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীসমূহ, মায়ানমারের ইরাবতী এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় বিভিন্ন নদীসহ পদ্মা, যমুনা, মেঘনা ও কর্ণফুলি নদী ইলিশের আবাসস্থল।
ইলিশের খাদ্য
ইলিশ মাছ মূলত প্লাংকটনভোজী। পানির উপরিভাগে প্রাপ্ত ভাসমান খাদ্যকণা তাদের প্রধান খাবার। খাদ্যতালিকায় আরো রয়েছে চিংড়ি, কাঁকড়া, ছোট শামুক,নীল-সবুজ শৈবাল, ডায়াটম, ডেসমিড, কোপিপোড, রটিফার ও জৈব বর্জ্যইত্যাদিও । তবে এদের খাদ্যাভ্যাস বয়স ও ঋতুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।