ইউক্রেন হলো সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র। আর ন্যাটো হলো সামরিক জোট। ১৯৪৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ ১২টি দেশ নিয়ে সামরিক জোট ন্যাটোর যাত্রা শুরু। ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ইউরোপে রাশিয়ার (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন) বিস্তৃতি ঠেকানোর লক্ষ্য নিয়ে মূলত সামরিক জোটটি গড়ে তোলা হয়েছিল। এর প্রতিক্রিয়ায় ১৯৫৫ সালে ওয়ারস প্যাক্ট নামে পূর্ব ইউরোপীয় কমিউনিস্ট দেশগুলোর সামরিক জোট গড়ে তোলে সোভিয়েত রাশিয়া। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পর ওয়ারস প্যাক্টভুক্ত কয়েকটি দেশ ন্যাটো জোটে যোগ দেয়। বর্তমানে ন্যাটোর সদস্যসংখ্যা ৩০।
ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য নয়। তবে এটি ন্যাটোর ‘সহযোগী’ দেশ। আর সহযোগী দেশ হওয়ার মানে হলো ভবিষ্যতে কখনো ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। আর এমনটা হতে দিতে চায় না রাশিয়া। ইউক্রেন যেন ন্যাটোতে যোগ দিতে না পারে, সে ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে নিশ্চয়তা চায় ক্রেমলিন। অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্ব সে আশ্বাস দিতে চায় না।
ইউক্রেনে রাশিয়ার বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর বিপুলসংখ্যক মানুষের বসবাস। রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনও বেশ নিবিড়। কৌশলগতভাবে ইউক্রেনকে নিজেদের বাড়ির আঙিনার মতোই সংলগ্ন মনে করে রাশিয়া।
মস্কোর অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর মিত্ররা ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করছে এবং যৌথ মহড়া চালাচ্ছে। এ ধরনের পদক্ষেপের কারণে ইউক্রেনের সরকারপন্থীরা জোরপূর্বক বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকার দখল নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। রাশিয়ার আশঙ্কা, ন্যাটোর কিছুসংখ্যক সদস্যদেশ ইউক্রেনে সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করতে পারে। আর তাতে ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ না দিলেও ওই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখার সুযোগ পাবে জোটটি।
প্রেসিডেন্ট পুতিন দাবি করে আসছেন, ন্যাটো জোটকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে পশ্চিমা বিশ্ব। তিনি চান পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিক। পুতিন দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে যাচ্ছেন, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো বিস্তার ঘটাবে না বলে ১৯৯০ সালে দেওয়া একটি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে ন্যাটো রাশিয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। জোটটি বলছে, তাদের সদস্যদেশগুলোর অল্প কয়েকটির সঙ্গে রাশিয়ার সীমানা রয়েছে। নিজেদের আত্মরক্ষামূলক জোট হিসেবে উল্লেখ করেছে ন্যাটো।
অনেকের বিশ্বাস, নিজেদের নিরাপত্তামূলক দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার জন্য পশ্চিমা বিশ্বের ওপর চাপ তৈরির চেষ্টায় ইউক্রেন সীমান্তে সেনা উপস্থিতি বাড়াচ্ছে রাশিয়া।