আজ বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। প্রতিবছর ২৯ অক্টোবর বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উদযাপিত হয়। মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কোনো কারণে বিঘ্নিত হলে স্ট্রোক সংঘটিত হয়। বিশেষ করে রক্তনালী বন্ধ হয়ে কিংবা রক্তনালী ছিঁড়ে মস্তিষ্কে এই রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। রক্তে থাকে অক্সিজেন আর পুষ্টিগুণ। ফলে অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কের টিস্যুগুলো মারা যায়। স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় কারণ হলো উচ্চরক্তচাপ। সারাবিশ্বে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক।
স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে এক বছরে স্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, দেশে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ২০১৯ সালে মারা গিয়েছিলেন ৪৫ হাজার ৫০২ জন। ২০২০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ৮৫ হাজার ৩৬০ জনে দাঁড়ায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন- সচেতনতার ঘাটতি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য সেবনের প্রবণতা, রক্তে চর্বি বেশি থাকা , অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনসহ নানা কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে। এ কারণে মৃত্যুও বাড়ছে। তাছাড়া মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। বয়স বাড়লে স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ে।৬০ বছরের বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ স্ট্রোক। সে হিসেবে মৃত্যুও বাড়ছে। এ ছাড়া করোনার সময়ে অনেকেই দুশ্চিন্তা ও নানা মানসিক চাপে ছিল। স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধির এটিও একটি কারণ। সে কারণেও ২০২০ সালে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে থাকতে পারে।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান’। বাংলাদেশে প্রতিবছর ২৯ অক্টোবর দিবসটি পালন করে আসছে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশন। বাংলাদেশ নিউরোলজি অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে দিবসটির আয়োজন করা হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বে অসংক্রামক ব্যাধির মধ্যে হৃদ্রোগের পরেই স্ট্রোকের অবস্থান। পঙ্গুত্ব বা শারীরিক অক্ষমতার জন্য স্ট্রোককেই বেশি দায়ী করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মতে,বিশ্বে প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্ট্রোকে আক্রান্তদের মধ্যে ৪০ ভাগ মারা যায়, আর ৩০ ভাগ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তারা বেঁচে থেকেও দুর্বিষহ জীবনযাপন করেন। । এই রোগীরা পরিবারের বোঝা হয়ে যান। চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। তবে শিশুদেরও স্ট্রোক হতে পারে। বর্তমানে অল্প বয়সে স্ট্রোকে আক্রান্ত হবার ঘটনাও ঘটছে। নারীর চেয়ে পুরুষদের মধ্যেই স্ট্রোকের প্রবণতা সচরাচর বেশি দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্ট্রোক দুই ধরনের। এক, রক্তনালি বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং দুই, রক্তনালি ফেটে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ।
স্ট্রোকের লক্ষণগুলো:
- শরীরের ভারসাম্য রাখতে সমস্যা হওয়া,
- কথা জড়িয়ে যাওয়া,
- অচেতন হয়ে পড়া,
- মাথা ঘুরানোর সাথে সাথে চোখে ঝাপসা দেখা,
- চারদিক অন্ধকার লাগা বা ডাবল দেখা,
- হাঁটতে অসুবিধা এবং ভারসাম্য রক্ষায় সমস্যা হওয়া
- সমস্ত শরীর ঘেমে যেতে পারে,
- দুর্বলতা বা অবশ লাগা,
- মুখ বেঁকে যাওয়া,
- অনেক সময় হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া,
- হঠাত্ অসহ্য মাথা ব্যথার সাথে বমি হওয়া ,
- প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা,
- শরীরের এক দিক অবশ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
প্রতিরোধ:
স্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য রোগ । স্বাস্থ্যসম্মত জীবন ব্যবস্থা বজায় রাখলে অনেকখানি ঝুঁকি কমানো সম্ভব। স্ট্রোক থেকে রক্ষা পেতে হলে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা উচিত। কমপক্ষে রোজ ৪৫ মিনিট ঘাম ঝরিয়ে হাঁটা উচিত। নিয়মিত সঠিকভাবে ঔষধ সেবনের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। চর্বি ও অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাবার যেমন- ফাস্টফুড, বাদাম, ঘি, বিরিয়ানী, চিংড়ি, খাসির মাংস, ডিমের কুসম যতটুকু সম্ভব পরিহার করুন এবং ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য এসব খাবার গ্রহণ একদম উচিত নয়। ধুমপান এবং মাদক সেবনকে না বলুন। যে কোন প্রতিকূল পরিবেশেও স্বাভাবিক থাকুন, সবসময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন, দৈনিক ৬ ঘন্টা ঘুম নিশ্চিত করুন।
আক্রান্ত হলে করণীয়:
স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলেই রোগীর অবস্থা অনুযায়ী অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে অথবা একজন নিউরো মেডিসিন বা স্নায়ু রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। প্রকৃতপক্ষে স্ট্রোকের চিকিত্সার জন্য প্রয়োজন সমন্বিত চিকিত্সা ব্যবস্থা। যেমন- কোনো কোনো স্ট্রোক রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে অপারেশন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে, সে ক্ষেত্রে নিউরো সার্জনের উপস্থিতি কাম্য। পাশাপাশি অনেক স্ট্রোক রোগীর হার্টের রোগ থাকতে পারে। এসব ক্ষেত্রে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শের প্রয়োজন পড়ে।