প্রতি বছর ২১ নভেম্বর সারা বিশ্বে বিশ্ব মৎস্য দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশে ২০১২ সাল থেকে ‘বিশ্ব মৎস্য দিবস’ পালিত হয়ে আসছে।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি মৎস্য আহরণ করা হয়েছে এবং এক তৃতীয়াংশেরও বেশি হ্রাসের কারণগুলি হলো আবাসস্থল হারানো, দূষণ এবং বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি। মাছ সারা বিশ্বের মানুষের খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই কারণেই বেশিরভাগ মানব বসতি, ছোট গ্রাম হোক বা শহর, জলাশয়ের কাছাকাছি অবস্থিত। বেঁচে থাকার জন্য এবং পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে পানির গুরুত্ব ছাড়াও এটি মাছ ও জলজ প্রোটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। বিশ্ব মৎস্য দিবস মানুষের জীবন, জল এবং জলের ভিতরে এবং বাইরে উভয়ই যে জীবন টিকে থাকে তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্ব তুলে ধরতে সাহায্য করে৷
পুষ্টিবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন মস্তিষ্ক-সহ শরীরের বিভিন্ন কোষের প্রাচীর (সেল মেমব্রেন) গঠন করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা সপ্তাহে তিন দিন বা বেশি মাছ খান তাঁদের মস্তিষ্কের নিউরন কোষ অনেক বেশি সুগঠিত ও বেশি কর্মক্ষম। বিশেষ করে তৈলাক্ত মাছ (ইলিশ, গুরজাওলি, আড়, ম্যাকারেল, ভেটকি, পমফ্রেট, বোয়াল, চিতল, পাকা রুই ও কাতলা ইত্যাদি) থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, আয়োডিন, ভিটামিন ডি, ফসফরাস-সহ নানা খনিজ আমাদের মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত করার পাশাপাশি সামগ্রিক ভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। তাই সারা সপ্তাহে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এ সব মাছ খেতে হবে। প্রতিদিন মাছ খেলে আরথারাইটিস ও ডায়বেটিসের মতো রোগ শরীরে থাবা বসাতে পারে না। নিয়মিত মাছ খেলে হার্ট অ্যাটাক ও ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি কিছুটা কমে। আমেরিকায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষের উপর এক স্টাডি করা হয়েছে। যাঁরা সপ্তাহে মাত্র একদিন মাছ খান তাঁদের হার্টের অসুখের হার অন্যদের থেকে ১৫% কম। বার্ধক্যজনিত কারণে চোখের ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে ফিশ ডায়েট। নিয়ম করে মাছ খেলে বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়। মাছে যে ভিটামিন ডি, ডিএইচএ ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আছে সেগুলো সবটাই অ্যান্টি-ডিপ্রেশানের জন্য দারুণ কার্যকরী। প্রতিদিন মাছ খেলে শুধু আপনার শরীর নয় মন ও ভালো থাকবে। ইউরোপ বা আমেরিকার মতো এই দেশে সামুদ্রিক মাছ, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে বা বাঙালিদের মধ্যে সমুদ্রের মাছ অতটা জনপ্রিয় নয়। তবে উপকূল অঞ্চলের মানুষ সমুদ্রের মাছ খায়। বাঙালিরাও যে অল্প বিস্তর সামুদ্রিক মাছ খান না, তা নয়। রোজকার পাতে না থাকলেও মাঝে মাঝে এই মাছ খাওয়া হয়। সমুদ্রের মাছ বলতেই প্রথমেই ইলিশের কথাই মনে পড়ে। বার্ধক্যজনিত কারণে চোখের ম্যাকিউলার ডিজেনারেশন কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে ফিশ ডায়েট। ইনস্টিটিউট অফ হেলদি এজিংয়ে ৬৫ – ৯৪ বছর বয়সি ৮০০ ব্যক্তির উপর সমীক্ষা করা হয়েছে। সেটি বলছে, যাঁরা নিয়ম করে সপ্তাহে দু-দিন মাছ খান তাঁদের অ্যালঝাইমার্স ডিজিজের ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। এমনকি এঁদের ডিমেনশিয়া অর্থাৎ ভুলে যাওয়ার অসুখ অন্যদের তুলনায় কম। নিয়ম করে মাছ খেলে বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের পরামর্শ সপ্তাহে ৩৫০-৪০০ গ্রাম মাছ খেতে পারলে অনেক অসুখকে দূরে সরিয়ে রাখা যাবে। ছোট থেকেই মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে ভাল হয়। ইলিশ হোক বা পোনা, পাতে রাখুন এক টুকরো মাছ।
মাৎস্য সম্পদ ক্রমশ হারিয়ে যাওয়ার জন্য মূলত অনেকগুলো কারণই দায়ী। এরমধ্যে মধ্যে জলবায়ুর প্রভাব, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, কারেন্ট জালের অবৈধ ব্যবহার, ফসলি জমিতে অপরিকল্পিত কীটনাশক ব্যবহার, জলাশয় দূষণ, নদ-নদীর নব্যতা হ্রাস, উজানে বাঁধ নির্মাণ, নদী সংশ্লিষ্ট খাল-বিলের গভীরতা কমে যাওয়া, ডোবা ও জলাশয় ভরাট করা, মা মাছের আবাসস্থলের অভাব, ডিম ছাড়ার আগেই মা মাছ ধরে ফেলা। এছাড়াও, সমুদ্র এবং উপকূলীয় দূষণ, অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং যান্ত্রিকীকরণে মাছ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
এই সমস্যাগুলো সম্মিলিতভাবে সমাধান না করলে সংকট আরও গভীর হবে। বিশ্ব মৎস্য দিবস এই সমস্যাগুলিকে তুলে ধরতে সাহায্য করে এবং আমরা যে ক্রমবর্ধমান আন্তঃসংযুক্ত সমস্যাগুলির সম্মুখীন হচ্ছি, এবং দীর্ঘমেয়াদে, মাছের মজুদ বজায় রাখার টেকসই উপায়গুলির সমাধান খোঁজার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়৷
মৎস্য বিষয়ক তথ্য
- ছোট আকারের মৎস্য (সামুদ্রিক এবং অভ্যন্তরীণ) মৎস্য চাষে জড়িতদের প্রায় ৯০ শতাংশ নিয়োগ করে।
- অভ্যন্তরীণ মৎস্য আহরণের রিপোর্টের ৬৫শতাংশ নিম্ন আয়ের খাদ্য-ঘাটতি দেশগুলি থেকে।
- অনুমান পরিবর্তিত হয়, তবে উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রায় ৩০ মিলিয়ন থেকে ৬০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ অভ্যন্তরীণ মৎস্য চাষে জড়িত; এটা মনে করা হয় যে প্রায় ৫০ শতাংশ নারী।
- বিশ্বের খাদ্যতালিকাগত প্রোটিনের ২৫% এরও বেশি মাছ দ্বারা সরবরাহ করা হয়।
- মানব জনসংখ্যা বছরে ১০০ মিলিয়ন টন মাছ খায়
- আফ্রিকার ১ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে ২০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ নিয়মিত মাছ খায় এবং এর প্রায় অর্ধেকই আসে অভ্যন্তরীণ মৎস্য চাষ থেকে।
- মাছ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধিতে বিশ্বে দ্বিতীয় বাংলাদেশ।
- ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে প্রথম। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ আহরণে বাংলাদেশ তৃতীয়, মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে চতুর্থ