সম্প্রতি ১ হাজার কিডনি প্রতিস্থাপনের মাইলফলক ছুঁয়েছেন অধ্যাপক কামরুল ইসলাম ও তার প্রতিষ্ঠান শ্যামলীর সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস (সিকেডি) অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতাল। গরিব রোগীদের কম মূল্যে কিডনি প্রতিস্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম। বর্তমানে সপ্তাহে চারটি করে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে এ হাসপাতালে। পাবনার ঈশ্বরদীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মো. আমিনুল ইসলামের ছেলে ডা. কামরুল ইসলাম দেশের একজন প্রখ্যাত কিডনি চিকিৎসক। ১৯৯০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে স্বর্ণপদকসহ এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৫ সালে এফসিপিএস এবং ২০০০ সালে বিএসএমএমইউ থেকে ইউরোলজিতে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের রয়েল কলেজ থেকে তিনি এফআরসিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট বিষয়ে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে ইউরোলজি সোসাইটি স্বর্ণপদক প্রদান করে।
চলমান করোনা মহামারির মধ্যে গণস্বাস্থ্য কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার ছাড়া যখন সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিসসহ কিডনি রোগীদের অন্য সেবা কার্যক্রমগুলো বন্ধ ছিল, তখনও সিকেডি হাসপাতাল তার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। মহামারির দেড় বছরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ২৫০টির বেশি কিডনি।
অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন,’ আমাদের এখনে কিডনি প্রতিস্থাপনে খরচ হয় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। এই খরচের মধ্যে রয়েছে দুজন রোগীর অপারেশন। যিনি কিডনি ডোনেট করেন তার অপারেশনের খরচ আর যিনি কিডনি নেন তার অপারেশনের খরচ। এছাড়াও যিনি নেন তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ রাখতে হয় ১৪ দিন, ওই খরচও। ডোনার যে সাত দিন থাকেন, ওই খরচ ছাড়াও ওষুধ, ডাক্তারের খরচ, এনেস্থেসিয়া এবং ওটির খরচসহ সবকিছু মিলিয়ে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।”
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এখানে সবার জন্যই সমান খরচ। আমি এখানে গরিব আর ধনী বলে ভাগ করি না। আমাদের কিছু নীতি রয়েছে। একই প্রতিস্থাপনে অন্য হাসপাতালগুলোতে বিশেষ করে ভারতে যারা যান, তাদের কমপক্ষে ১২-২৫ লাখ টাকা খরচ হয়। কিডনি প্রতিস্থাপনের পরবর্তী যত রকমের পরীক্ষা হয়, এখানে প্রায় ১০ বছরের রোগী আছেন যারা প্রতিমাসে ফলোআপ করছেন, তাদের পরীক্ষা আমরা বিনাপয়সায় করছি। তাদের ডাক্তার দেখাতে কোনো ফি দেওয়া লাগে না। তারা শুধু রক্ত দিবে আর ডাক্তারকে রক্তের রিপোর্ট দেবে, ডাক্তার দেখবেন। এরপর রোগীরা চিকিৎসা নিয়ে চলে যাবেন। এরকম প্রতি মাসে আমাদের প্রায় ৫-৬শ’ রোগী আসেন। তাদের প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার পরীক্ষা বিনাপয়সায় হচ্ছে।’
নির্ধারিত ন্যূনতম খরচ বাদে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য বিশেষজ্ঞ সার্জনের কোনো ফি নেন না অধ্যাপক কামরুল। রোগীদের ফলোআপ পরীক্ষার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ ও রিপোর্ট দেখার ফিও নেওয়া হয় না তার হাসপাতালে। এ ছাড়া, খরচ কমাতে কিডনি সংরক্ষণের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা এক ধরনের দামি তরলের বিকল্প তৈরি করেছেন তিনি। এভাবে নিজ পেশার মাধ্যমে সমাজের নিম্নআয়ের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রতি মানবিকতা ও দায়িত্বশীলতার অনন্য নজির স্থাপন করে চলেছেন এই অধ্যাপক।